তিল বাংলার একটি বহুল পরিচিত চৈতালী তৈল বীজ।ইহার গাছ,ফুল,ফল খুবই সুন্দর, তবে বীজের আকার খুবই ছোট ।
‘তাল গাছ’ খুবই পরিচিত একটি গাছ উপমহাদেশে।গাছগুলো এক পায়ে দাঁড়াইয়া আকাশে উঁকি মারিতেছে।মাঠ, গ্রামের রাস্তাঘাট সর্বত্র গাছটির দেখা মিলিবে।ইহার ফলটি বেশ বড় এবং ইহা হইতে রস পাওয়া যায়। আবার শাঁস, পাঁকা তাল ইত্যাদি নানাভাবেও ইহা খাওয়া যায়।

বাংলা ভাষায় তিল ও তালের আকারের উপর ভিত্তি করিয়া বিভিন্ন বিষয়ের তুলনার্থে ‘তিলকে তাল করিও না’ বলিয়া একটি নীতি বাক্য বহুল প্রচলিত আছে। এখানে বাক্যটির অর্থ খুবই পরিস্কার হইলেও সমাজ জীবনে কোনটি তিল আর কোনটি তাল তাহা লইয়া নিশ্চয়ই বিতর্ক আছে।

যেমন ধরুন, যথাযথ প্রশিক্ষন না থাকা ও ট্রাফিক আইন না মানিয়া চলিবার কারনে রোড এক্সিডেন্ট বাড়িয়া যাইতেছে,চারিদিকে প্রচন্ড শব্দ দুষন চলিতেছে, যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলিয়া পরিবেশ দুষণ চলিতেছে, নেশা দ্রব্যাদি খুবই নাগালের মধ্যে পাওয়া যাইতেছে, নিরাপত্তার জন্য কন্যার পিতামাতাকে কাজ ফেলিয়া তাহাদের কন্যার সহিত ছায়ার মত লাগিয়া থাকিতে হইতেছে, কৃষকের নিকট হইতে দশ টাকায় সবজি ক্রয় করিয়া মধ্য সত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীরা আমাদের নিকট ত্রিশ টাকায় বিক্রি করিতেছে, কর্মক্ষেত্রে শিশুরা উদয়াস্ত নগন্য প্রাপ্তির বিনিময়ে কাজ করিতেছে,চিকিৎসার অভাবে অকালেই গরীবের জীবন প্রদীপ নিভিয়া যাইতেছে, হত দরিদ্র শ্রমিকদেরকে নিত্য বঞ্চনা করা হইতেছে,হাজার হাজার যুবক কাজ প্রাপ্তির জন্য মাতম করিতেছে,আশি বছর বয়সী নিবেদিত প্রাণ কোন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক চরম দারিদ্রের মধ্যে দিন যাপন করিতেছেন………..ইত্যাদি আমাদের বৃহত্তর সমাজ জীবনে খুবই ক্ষুদ্র,তুচ্ছ বা তিল পরিমান ঘটনা বলিয়া বিবেচিত হইতেছে।কিন্তু কেউ কোন একটি বিষয় সম্পর্কে কথা বলিতে চাহিলে বা গুরুত্ব দিতে চাহিলে অন্য কেউ তৎক্ষনাৎ বলিতেছে, ‘ইহা আর এমন কী, সামান্য তিল পরিমান বিষয় লইয়া মাথা ঘামাইবার কী আছে!

আরও কত কত বড় বিষয়ের খরব নাই।সেগুলি লইয়া ভাবুন।’ আমরা কি শুধু তাল লইয়াই ব্যস্ত থাকিব?তিলের কি কোনই গুরুত্ব নাই? এই সব তুচ্ছ, তিল পরিমান ঘটনাগুলিই যে সমাজে তাল পরিমান ঘটনার জন্মের পিছনে কাজ করিতেছে না তাহাই বা কে বলিবে?

©রতন ভট্টাচার্য