পা ভাঙ্গা অথচ হুইল চেয়ারে বসে চা বিক্রি করেন কিংবা অটোরিক্সা চালান,মহিলা হয়েও চলন্ত বাসে চকলেট বিক্রি করেন ,লম্বায় খাটো হওয়ার পরেও ড্রাইভারের সিটে বসতে না পেরে দাঁড়িয়ে থেকে সারাক্ষণ ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন|অন্ধ হওয়া সত্ত্বেও গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন, এমনকি অন্ধ হওয়ার পরেও ভিক্ষা না করে নিজে পেডেল দেন আর ছেলেকে ভ্যানের সামনে বসিয়ে ভ্যানের হ্যান্ডেল ঠিক রাখেন ,আশি বছরের মত বৃদ্ধ হয়েও ভিক্ষা না করে পাপড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন |যাদের দেখলে গর্বে বুক ভরে যায় |হৃদয়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা তাদের প্রতি |

অপরদিকে স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় ,গুরুত্বপূর্ণ মোড়,খ্যাতনামা দোকান , রেষ্টুরেন্ট, বাজারের সামনে যেখানে মানুষের চলাচল বেশি সেখানে দেখা যায় ভিক্ষার থলি হাত একদল ভিক্ষুক কে |যাদের মধ্যে অনেকের কাজ করার সামর্থ্য আছে, কিন্তু কাজ করছে না | এর কারন ভিক্ষা আজকাল বৃত্তি নয় ,পেশা হিসেবে দাঁড়িয়েছে |মানুষের অন্তরে সৃষ্টিকর্তা ভালোবাসার এক সাগর রেখেছেন যার ফলে কারও দুংখ-কষ্ট দেখলে স্বভাবতই আমরা ব্যথিত হই,আর এটাকেই কাজে লাগান অনেকে |এমন কি খোঁজ নিলে এর সংগঠন ও পাওয়া যায়, যার মাধ্যমে তারা(ভিক্ষা ব্যবসায়ীরা) সারাদিন যে টাকা বসে বসে পান তা সংগঠনের প্রধান কে দিতে হয় এবং সে এই টাকা থেকে এই ভিক্ষুকদের দৈনিক কিংবা মাসিক চুক্তির ভিত্তিতে বেতন দিয়ে থাকে | “আমার কোমরের হাড় ভাঙ্গা,মৃগি ব্যারাম,বাড়ি ঘর সব পুড়ে গেছে কিংবা নদীতে ভেসে গেছে,যুবতী মেয়ের টাকার অভাবে বিয়ে দিতে পারছিনা ,প্রতিদিন ৫০৩ টাকার ঔষধ লাগে ,মায়ের অপারেশন ইত্যাদি ইত্যাদি |” আর ভিক্ষুকদের সাইনবোর্ডে লেখা এ কথাগুলো দেখলে কার না দয়া হয়?কার না শরীরের পশম খাড়া হয়ে উঠে ?নয়জন এড়িয়ে গেলেও দশজনের মাথায় তারা ঠিকই ভিক্ষা পায় |আর এভাবে বসে থেকে তারা গড়ে দুই থেকে তিন হাজার টাকা প্রতিদিন আয় করে কোনো কাজ কর্ম ছাড়া|
তাই আমাদের ভিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে |শারীরিক সমস্যা,মানসিক সমস্যা,অর্থ নৈতিক সমস্যা মানুষের থাকবে ,উঁচু নিচুর ভেদাভেদ সমাজে থাকবে কিন্তু যাদের কোনো সমস্যা নেই তারা তো এভাবে প্রতারণা করার অধিকার রাখেনা |এমনও অনেক ভিক্ষুক আছে যারা দিনের বেলা ভিক্ষা করেন আর রাতের বেলা দামি সিগারেট কিনে ধুমপান করেন |আর এ ক্ষেত্রে তারা ধর্মকেও ব্যবহার করেন দাড়ি,টুপি,বোরকা যেন তাদের ইউনিফর্ম অথচ ইসলামে ভিক্ষাবৃত্তি পাপ |ইসলাম কাজ করে খেতে বলে এমনকি আমরা জানি, এক ব্যক্তির সম্বল হিসেবে শুধুমাত্র একটি কম্বল ছিলো মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাও তাকে বিক্রি করতে বলেন এবং বিক্রিত অর্থ দিয়ে কুঠার কিনে কাঠ কেটে কাঠ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহের জন্য বলেন , ভিক্ষা নিষিদ্ধ করেন |

তাই আশা করি পুলিশ প্রশাসন এ ব্যপারে পদক্ষেপ গ্রহন করবেন ,শুধুমাত্র ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা লিখে সাইনবোর্ড কিংবা ব্যানার টাঙালে হবে না |দরিদ্র জনগোষ্ঠী থাকবে কিন্তু যারা কাজ করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কাজ না করে ফায়দা লুটে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে |আর আমাদের কেও ভিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে|শারীরিক কিংবা মানসিক সমস্যা ছাড়া আমরা কাউকে এরপর থেকে ভিক্ষা দিব না |শারীরিক কিংবা মানসিক সমস্যা ছাড়া অন্য কোনো সমস্যা থাকলে বিস্তারিত জেনে তারপর ভিক্ষা দিব | এসকল কাজের মাধ্যমে আমরা ভিক্ষা ব্যবসায়ীদের কে প্রতিহত করতে পারব |

লেখক ঃ মুহাম্মদ হাসান মাহমুদ ইলিয়াস
শিক্ষার্থী,দর্শন বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় .

আবাসিক শিক্ষার্থী ,স্যার এ.এফ.রহমান হল,ঢাবি.