জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জী ইউনিয়নের নন্দইল গ্রামে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আদিবাসীদের স্বরণে নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম আদিবাসী ভাস্কর্য। নির্মানের প্রথমদিকে আদিবাসী সম্প্রদায় সহ স্থানীয় এলাকাবাসী ভাস্কর্যকে ঘিরে নানাবিদ আশায় আশাবাদী হলেও কয়েক বছরের ব্যবধানে ভাস্কর্যটির সঠিক রক্ষণাবেক্ষন, অযত্নে আর অবহেলায় আজ ভাস্কর্যটির সৌন্দর্য্য হারাতে বসেছে।

ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা চারিদিকে সবুজে ঘেরা নন্দইল-শ্রীমন্তপুর গ্রামের কোল ঘেঁষে মাঠের মধ্যে নিরিবিলি পরিবেশে নির্মিত হয়েছে ভাস্কর্যটি। জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় ১৯৭১ সালের ২৬ আগষ্ট সোমবার বিকালে তৎকালীন কড়িয়া বিডিআর ক্যাম্পের পাক সেনারা ধরঞ্জী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে মহড়া দিয়ে যাওয়ার সময় নন্দইল গ্রামের লক্ষণ হেমরমের দুই পুত্র খোকা হেমরম ও মন্টু হেমরম, একই গ্রামের কালু সরেনের পুত্র জোহন সরেন ও সরেন হেমরম কে বাড়ী থেকে চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে যায়। পথিমধ্যে উপজেলার পাড়ইল তিতলতলা নামকস্থানে তাদের হাত পা বেঁধে মাটির গর্তে ফেলে বন্দুকের ব্যায়নট দিয়ে নির্মম নির্যাতন করে জীবন্ত অবস্থায় মাটি চাপা দিয়ে হত্যা করে।

স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পর হলেও পাঁচবিবির উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বিশিষ্ট কলামিষ্ট সাংবাদিক আমিনুল হক বাবুলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১০ ও ২০১১ অর্থ বছরে জয়পুরহাট জেলা পরিষদের অর্থায়ন ও তত্বাবধানে নন্দইল গ্রামে ১৯৭১- এ শহীদ আদিবাসীদের স্বরণে ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়। আদিবাসীদের ঐতিহ্য ও সংগ্রামের ইতিহাসের প্রতীক হিসেবে শহীদের স্বরণে নির্মাণ করা হয়েছে উচু বেদীর উপরে তীর ধনুক হাতে পুরুষ এবং নারীর অংশ গ্রহণমূলক ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটির শিল্পী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক জনাব কনক।

মূল ভাস্কর্যের চর্তুদিকে নিরাপত্ত বেষ্টনী দিলেও ভাস্কর্য রক্ষানাবেক্ষনের কোন সু-ব্যবস্থা নেই। ভাস্কর্যের সৌন্দয্য হারিয়ে গেছে অনেকাংশে। ভাস্কর্যের তীর সংবলিত অংশের তীর নেই, কে বা কারা তা ভেঙ্গে ফেলেছে। তীর রাখার বাক্সের তীরের বের হয়ে থাকা অংশ গুলো বাঁকিয়ে ও ভেঙ্গে নষ্ট করা হয়েছে। ফলে ভাস্কর্যটির সৌন্দয্য নষ্ট হয়ে গেছে। মাদক সেবীরা প্রতিনিয়ত বসে মাদক সেবনের আখড়া বানিয়ে ফেলেছে। ভাস্কর্যটির চারিদিকে নিরাপত্তা সীমানা প্রাচীর থাকায় মাদক সেবীদের জন্য সেখানে নিরাপদে বসে মাদক সেবনে সহজ। মূল ভাস্কর্যের পিছনে গাঁজা সেবনের জমজমাট আসর বসে। মূল ফটকে তালা না থাকায় ও সীমানা প্রাচীরের উচ্চতা কম হওয়ায় নিরিবিলি এলাকা ও ভিতরে প্রবেশে বাধা না থাকায় মাদব সেবীদের নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধার সাবেক কমান্ডার আলহাজ্ব মিছির উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন দিবসে আমরা শুধুমাত্র পুষ্পস্তবক দেই। পবিত্রতা বা রক্ষানাবেক্ষনের দায়িত্ব কমিটির। ভাস্কর্য রক্ষানাবেক্ষনের কমিটির সভাপতি সুজিত টুডু বলেন, আমি মৌাখিক ভাবে অনেকবার মূল উদ্যোক্তা আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাইয়ের নিকট বলেছি। উনি ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন। এলাকাবাসীর দাবী মুক্তিযুদ্ধের আদিবাসী শহীদ পরিবারের স্মৃতি স্বরপ দেশের প্রথম আদিবাসী ভাস্কর্যটির পবিত্রতা ও রক্ষানাবেক্ষনের জন্য উদ্যোক্তা সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।