মুক্তিযোদ্ধা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধার আওতা বাড়িয়ে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট বিল-২০১৮’ সংসদে তোলা হয়েছে। বিলটিতে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাও নির্ধারণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। পরে তা পরীক্ষা করে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়া জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। বিলে বলা হয়েছে, বীর মুক্তিযোদ্ধার অবর্তমানে তার স্ত্রী বা স্বামী তাদের অবর্তমানে মুক্তিযোদ্ধার পিতা-মাতা, তাদের অবর্তমানে সন্তান সুবিধা পাবেন। তবে এদের অবর্তমানে মুক্তিযোদ্ধার ভাই-বোন সুবিধা পাবেন।

বিলে মুক্তিযুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনী, পুলিশ, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীতে কর্মরত সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধা ভাতার আওতায় আনা হচ্ছে। বিলে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাও নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে,

‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়ে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও জামায়াতে ইসলাম এবং তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেছে এরূপ সকল বেসামরিক নাগরিক এবং সশস্ত্র বাহিনী, মুজিব বাহিনী, মুক্তি বাহিনী ও অন্যান্য স্বীকৃত বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, ইপিআর, নৌ কমান্ডো, আনসার বাহিনীর সদস্য যাদের বয়স সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বয়সসীমার মধ্যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন।’

বিলে বলা হয়েছে, এছাড়া যেসব ব্যক্তি মুক্তিযদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন অংশে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন; যেসকল বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন এবং যেসকল বাংলাদেশি নাগরিক বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন; যারা মুজিবনগর সরকারের অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন; মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও মুজিবনগর সরকারের সাথে সম্পৃক্ত সকল এমএনএ, এমপিএ যারা পরে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন; পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী কর্তৃত নির্যাতিতা সকল নারী; স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সকল শিল্পী ও কলা-কুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সকল বাংলাদেশি সাংবাদিক, স্বাধীনবাংলা ফুটবল দলের সকল খেলোয়াড় এবং মুক্তিযুদ্ধকালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসেবা প্রদানকারী মেডিক্যাল টিমের সকল ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা সহকারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন।’

এতদিন ট্রাস্টটি ১৯৭২ সালের ‘প্রেসিডেন্ট’স অর্ডার’ দিয়ে পরিচালিত হতো।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিরক্ষা বাহিনী, পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সদদ্য বা সরকারি পেনশনভোগী অথবা যাদের নিয়মিত আয়ের উৎস আছে তারা অন্তর্ভুক্ত না থাকায় তাদের সম্মানী ভাতা দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণসাধনকল্পে ওই অর্ডার রহিত করে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করে নতুন আইন করা আবশ্যক।’