গত ৩০ আগস্ট ২০১৮ খ্রি. তারিখে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কর্তৃক ‘সেবা খাতে দুর্নীতি : জাতীয় খানা জরিপ, ২০১৭’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। উল্লিখিত সংবাদের প্রতি বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের দৃষ্টি আর্কষিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত দুই লক্ষাধিক সদস্য বাংলাদেশের ১৬ কোটির অধিক জনগণের শান্তি, নিরাপত্তা এবং জন-শৃঙ্খলা নিশ্চিতকল্পে দিবারাত্রি নিরবিছিন্নভাবে দায়িত্ব পালন করছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। ১৯৭১ সালের প্রথম প্রহরে রাজারবাগ থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম বুলেট ছুড়েছিল পুলিশের অকুতোভয় সদস্যরা। সমসাময়িক সময়ে যুদ্ধাপরাধীর বিচার, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রনে সাফল্য, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন ও চাঞ্চল্যকর মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত থেকে শুরু করে বিভিন্ন উৎসব, পার্বণ ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে বাংলাদেশ পুলিশ নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে, যা রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। সেক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর মত রাষ্ট্রের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান তদন্তকারী সংস্থাকে মুষ্টিমেয় কতিপয় লোকের মতামতের ভিত্তিতে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। তাই টিআইবির উল্লিখিত জরিপ সম্পর্কে বাংলাদেশ পুলিশের মতামত নি¤েœ তুলে ধরা হলো-

এই জরিপে যারা মতামত দিয়েছেন তাদের মধ্যে কতজন বা আদৌ কেউ প্রত্যক্ষভাবে উল্লিখিত সময়ে পুলিশি সেবা নিতে গিয়েছিলেন কি-না তাও স্পষ্ট নয়। ফলে এরূপ একটি প্রতিবেদন শুধু শ্রুতি জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা কতটা যৌক্তিক বা সঠিক তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক। গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবি Empirical Study এর ভিত্তিতে গবেষণা সম্পন্ন করেছে বলে অভিমত ব্যক্ত করলেও প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে পূর্বধারণাবশত ভিত্তির ওপর পুলিশকে দুর্নীতিগ্রস্থ সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বিধায় বাংলাদেশ পুলিশ প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনটি দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করছে।

টিআইবি এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের সেবা খাতে দুর্নীতির জরিপের জন্য মাত্র ১৫৫৮১ টি খানার (গবেষণা প্রতিবেদনের পৃষ্ঠা-১৪) মতামত নেয়া হয়েছে, যা মোট খানার মাত্র ০.০৪১৭ শতাংশ (গবেষণা প্রতিবেদনের পৃষ্ঠা-২২)। আলোচ্য গবেষণায় পুলিশ সম্পর্কে বিবেচ্য ১৫৫৮১ টি খানার ১১ শতাংশ অর্থাৎ ১৭১৪ টি খানা প্রধানদের (গবেষণা প্রতিবেদনের পৃষ্ঠা-২৮) মতামত নেয়া হয়েছে, যা মোট খানার মাত্র ০.০০৪৫৯ শতাংশ। এ রকম কমসংখ্যক খানার ঔপনিবেশিক ধারাবাহিকতার ধারণাপ্রসূত মতামতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ পুলিশের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী ও সেবামূলক সংস্থাকে দুর্নীতিগ্রস্থ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। নানা সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দেশের উন্নয়নের ধারা সমুন্নত রাখতে অক্লান্ত পরিশ্রম কাজ করা এই বাহিনীর সদস্যদের সম্পর্কে এই ধরণের অপরিপক্ক ও পূর্বধারণাপ্রসূত গবেষণার প্রকাশ বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে হতাশ করেছে। গবেষণা প্রতিবেদনের অধ্যায়-৪ এর খাতওয়ারি দুর্নীতির চিত্রে সেবা গ্রহণের হার সম্পর্কে বলা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে থানা পুলিশের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ৭১.৭ শতাংশ খানা সেবা গ্রহণ করেছে। এরপরেই ট্রাফিক পুলিশ ১৭.৪ শতাংশ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ ১৫.২ শতাংশ এবং অন্যান্য সংস্থা যেমন হাইওয়ে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, সিআইডি, ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ, ফাঁড়ির পুলিশ, স্থানীয় ক্যাম্প পুলিশ, কোর্ট পুলিশ ইত্যাদির কাছ থেকে ১৩.৬ শতাংশ খানা সেবা গ্রহণ করেছে (গবেষণা প্রতিবেদনের পৃষ্ঠা- ২৮)। উল্লিখিত সকল খানার সমষ্টি দাঁড়ায় ১১৭.৯ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ শতাংশের চেয়েও ১৭.৯ শতাংশ বেশি। এই একই উপাত্ত আবার সারণি ৪.১ এ উল্লেখ করা হয়েছে (গবেষণা প্রতিবেদনের পৃষ্ঠা- ২৯)। যেখানে স্পেশাল ব্রাঞ্চের শতকরা হার ১৫.২ এর পরিবর্তে ৫.৬ শতাংশ উল্লেখ করা হয়েছে । হাইওয়ে পুলিশের ক্ষেত্রে সেবা গ্রহনের খানার হার আলাদাভাবে ৫.৬ শতাংশ উল্লেখ করে আবার অন্যান্য ক্ষেত্রের সারিতে পুনরায় হাইওয়ে পুলিশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে (গবেষণা প্রতিবেদনের পৃষ্ঠা- ২৯)। সারণি ৪.১ এর সকল সেবা গ্রহনকারী খানার হারের সমষ্টি ১১৩.৯ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ শতাংশের চেয়েও ১৩.৯ শতাংশ বেশি। একই উপাত্তের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অংকে উপস্থাপন এবং দুইবার উপস্থাপন প্রতিবেদনের স্বচ্ছতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। ফলে টিআইবির একই সারণিতে শতাংশের হিসেবে গড়মিল, উপাত্তের মানের গড়মিল ও একই উপাত্তের দুইবার ব্যবহার- কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ টিআইবি প্রকৃত গবেষনা ব্যতীত তারা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মনগড়া উপাত্ত ব্যবহার করেছেন।

আলোচ্য গবেষণায় খানা প্রধানের শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে দেখা যায় ১০.১ শতাংশ খানা প্রধান নিরক্ষর, ১৯.৯ শতাংশ খানা প্রধান সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন, ২৬.০ শতাংশ খানা প্রধান শিক্ষার প্রাথমিক, ২৫.৭ শতাংশ মাধ্যমিক, ৭.২ শতাংশ উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১১.১ শতাংর্শ ¯œাতকসহ তদূর্ধ্ব শিক্ষা গ্রহণ করেছেন (গবেষণা প্রতিবেদনের পৃষ্ঠা-১৭)। এখানে ৩০ শতাংশ নিরক্ষর ও সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন খানার নিকট অনিয়ম বা দুর্নীতির সংজ্ঞা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা কিংবা দুর্নীতি ও অনিয়মের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য নির্ধারণে অস্বচ্ছতা থাকা স্বাভাবিক। তদুপরি প্রশ্নমালাসহ গবেষণাকর্মে দুর্নীতি ও অনিয়মকে সমার্থক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি ও অনিয়মের মধ্যে আইনগত ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। প্রচলিত আইনে দুর্নীতিকে সংজ্ঞায়িত করা হলেও গবেষণা জরিপে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। অধিকন্তু জরিপে দেখা যায় ¯œাতক ও তদূর্ধ্ব খানার চেয়ে নিরক্ষর ও সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন খানার পূর্বধারণাকে প্রাধাণ্য দেয়া হয়েছে। অধিকন্তু সেবা খাতের আলোচ্য গবেষণায় প্রশ্নমালা প্রস্তুতকরণের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা দেখানো হয়েছে। কিছু সেবার ক্ষেত্রে যেমন ঘুষ প্রদানে কে, কার জন্য ও কেন ঘুষ চেয়েছে এভাবে সরাসরি প্রশ্ন করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশের ক্ষেত্রে প্রশ্নমালার প্রশ্নে উত্তরদাতা যাতে অস্পষ্ট উত্তর দেয় এমন প্রশ্ন করা হয়েছে। এরূপ ক্ষেত্রে গবেষণায় বিবেচ্য প্রশ্নমালার মাধ্যমে প্রাপ্ত মতামত জরিপের ফলাফলকে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

জরিপে সেবার খাত হিসেবে ট্রাফিক পুলিশকে দেখানো হয়েছে। কিন্তু খানাগুলো ট্রাফিক পুলিশের নিকট থেকে কি ধরণের সেবা গ্রহণ করেছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। উল্লেখ্য, যে সকল খানা ট্রাফিক পুলিশের সংস্পর্শে আসে তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ট্রাফিক আইন লংঘনকারী। এছাড়া খানা প্রতি ট্রাফিক পুলিশকে গড় ঘুষ প্রদানের পরিমাণ ৫৮৮২ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে যা সম্পূর্ণরূপে অবাস্তব (গবেষণা প্রতিবেদনের পৃষ্ঠা-২৯)। এক্ষেত্রে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক আইনে প্রসিকিউশন পর্যালোচনায় দেখা যায় গড় জরিমানার হার মাত্র ৫০০ টাকা। অন্যদিকে ঢাকার বাহিরে এ জরিমানার হার আরো কম। যেখানে ৫০০ টাকার কমে জরিমানা প্রদানের মাধ্যমে ট্রাফিক আইনে প্রসিকিউশন নিষ্পত্তি করা সম্ভব সেখানে ৫৮৮২ টাকা ঘুষ প্রদানের বিষয়টি জরিপকারী সংস্থার কল্পনাপ্রসূত এবং অতিরঞ্জন বলে প্রতীয়মান হয়। এমনকি গবেষণা প্রতিবেদনের সারণি ৪.১ তে সংস্থার ধরন উল্লেখ করতে গিয়ে হাইওয়ে পুলিশকে ২ বার দেখানো হয়েছে (গবেষণা প্রতিবেদনের পৃষ্ঠা-২৯)। টিআইবির মতো একটি প্রতিষ্ঠিত গবেষণা সংস্থার নিকট এটি অপ্রত্যাশিত যা প্রকৃত অর্থে তথ্যের অতিরঞ্জন এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

গবেষণা প্রতিবেদনের সারণি ৪.২ তে জিডি সেবা ২০.০ শতাংশ এবং এফআইআর সেবা ১১.১ শতাংশ গ্রহণকারী রয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে (গবেষণা প্রতিবেদনের পৃষ্ঠা-২৯)। বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, জিডি ও এফআইআর এর অনুপাত প্রায় ২:১, প্রকৃতপক্ষে সারাদেশে তদন্তযোগ্য জিডি ও এফআইআরের অনুপাত প্রায় ২০:১। এতে প্রতীয়মান হয় যে, তথ্য সংগ্রহের বেলায় তথ্যদাতা বা খানা নির্বাচনের ক্ষেত্রে দৈবচয়ন পদ্ধতি অনুসরণ না করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে টার্গেটভিত্তিক মামলায় সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বেছে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের মতো শৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হেয় করার হীন উদ্দেশ্যে এ ধরনের জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। একই সাথে বিষয়টি জরিপের গ্রহণযোগ্যতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।

বাংলাদেশ পুলিশ শৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে দেশের অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণের নিমিত্ত কোনো ঘটনার পক্ষ ও প্রতিপক্ষ উভয়কে নিয়ে কাজ করতে হয়। পুলিশ সবসময়ই প্রাপ্ত অভিযোগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের পর পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এক্ষেত্রে অভিযুক্তপক্ষ সর্বদাই পুলিশের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে থাকে। অপরদিকে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়া গেলে অভিযুক্তদেরকে অভিযোগের দায় হতে অব্যাহতি প্রদান করে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করা হলে বাদী পক্ষ পুলিশের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে থাকে বিধায় পুলিশের পক্ষে উভয় পক্ষকে কখনোই সন্তুষ্ট করা সম্ভব হয় না।

বাংলাদেশ পুলিশ সবচেয়ে দৃশ্যমান একটি পেশাদারী সংস্থা। ফলে দায়িত্বরত পুলিশের সামান্যতম ভুলভ্রান্তি সহজেই মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়। পুলিশের যে কোন শৃঙ্খলা পরিপন্থী আচরনের ক্ষেত্রে অনুসন্ধানপূর্বক যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। এক্ষেত্রে অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় প্রয়োজনে ফৌজদারী ব্যবস্থাও গ্রহন করা হয়ে থাকে । তাই সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা না করে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন দেশের একটি বৃহৎ সেবাপ্রদানকারী ও প্রধান তদন্তকারী সংস্থার বাস্তব অবস্থার পূর্ণ প্রতিফ লন হতে পারে না।

সামগ্রিকভাবে বলা যায়, টিআইবি প্রকাশিত এ জরিপের গবেষণা প্রতিবেদন সত্যিকার অর্থে স্পষ্ট, বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্য-নির্ভর নয়। গবেষণা প্রতিবেদনে শাব্দিক ব্যবহার পর্যালোচনা করলে বিষয়টি সহজেই প্রতীয়মান হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সাধারণত সার্বিকভাবে কোনো একটি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং কোনো ব্যক্তি বিশেষ দুর্নীতির সাথে বিচ্ছিন্নভাবে সম্পৃক্ত থাকতে পারে। এক্ষেত্রে, ব্যক্তি বিশেষের দুর্নীতি বা অপকর্মের দায় কোনোভাবেই সমগ্র প্রতিষ্ঠানের উপর বর্তায় না। তদুপরি, পুলিশ ইন্টারনাল ওভারসাইট সব সময় পুলিশের অপেশাদার ও অনৈতিক কার্যক্রমের উপর তদারকি অব্যাহত রাখে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে তৎপর থাকে। সেক্ষেত্রে উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ ব্যতীত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঢালাওভাবে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দেয়া সমীচীন নয়।

এ ধরণের উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং ধারণাপ্রসূত জরিপের গবেষণা প্রতিবেদন বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারের ফলে জনগণের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে অহেতুক নেতিবাচক ধারণাকে আরও সম্প্রসারিত ও প্রতিষ্ঠিত করবে। ফলশ্রুতিতে জনমনে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার চেষ্টা ম্লান হতে পারে এবং জনগণ ও পুলিশের মধ্যে দূরত্ব ও আস্থার সংকট সৃষ্টি হতে পারে যা কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য কাম্য নয়। অবাধ তথ্য প্রবাহ ও প্রযুক্তি নির্ভর এ যুগে পুলিশ বাহিনীকে ঔপনিবেশিক সংস্কৃতি থেকে বের করে এনে অবাধ যোগাযোগ ও বিকাশের প্রাণবন্ত পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশের কৌশলগত পরিকল্পনা এবং মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করে কর্মক্ষেত্রে পুলিশের সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশ নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কমিউনিটির সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সেবা প্রদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা অত্যন্ত জোরদার করা হয়েছে। মানবাধিকার ও জেন্ডার ইস্যু এবং পুলিশের Code of Conduct ইত্যাদি বিষয় সংক্রান্ত উৎকর্ষতা সাধনে বিশেষ প্রশিক্ষণ অব্যাহত রয়েছে। ঔপনিবেশিক পুলিশিং ব্যবস্থাকে সমসাময়িক কালের উপযোগী করে Reactive পুলিশিং ব্যবস্থার পাশাপাশি Proactive পুলিশিং চালু করা হয়েছে। পুলিশের সার্বিক কার্যক্রমে বর্তমানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, অংশীদারিত্ব ও গতিশীলতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। টিআইবি’র গবেষনার ফলাফল তর্কের খাতিরে যদি আমরা সঠিক বলে ধরে নেই তাহলে দেখা যায় যে, টিআইবির ২০১৫ সনের তুলনায় ২০১৭ সনের জরিপে পুলিশের দুর্নীতি হ্রাস পেয়েছে বলে দেখা যায় (গবেষণা প্রতিবেদনের পৃষ্ঠা-২৯)। অথচ গবেষণা প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

সকল প্রতিকূলতার মাঝে কাজ করেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে বাংলাদেশ পুলিশ বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উন্নয়নের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য ‘পরিবর্তনের প্রতিনিধি’ (Change agent) হিসেবে কাজ করতে সদা প্রস্তুত।

(মো. সাইফুর রহমান পিপিএম), অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (মতিঝিল বিভাগ)
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ

দপ্তর সম্পাদক, বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন