শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা মামলায় পাঁচ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। আজ বুধবার বিকেলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আরিফুর রহমান আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৪ জনের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করা হয়। তাদের মধ্যে অভিযুক্ত ১৯ জন বিভিন্ন স্থানে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বাকি পাঁচজনকে চার্জশিটে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযুকক্তরা হচ্ছেন- কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিম তারাপাশা এলাকার জাহিদুল হক তানিম, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাঘবপুর এলাকার জঙ্গি নেতা জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, শিবগঞ্জের হাজারদিঘা গ্রামের মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, নিহত জঙ্গি শফিউলের বাড়িওয়ালা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের পান্থাপাড়ার আনোয়ার হোসেন এবং কুষ্টিয়ার কুমারখালী সাদিপুর কাবলিপাড়ার জঙ্গি নেতা মো. আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল মাহফুজ। অভিযুক্ত পাঁচজনই এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়ায় এ হামালার ঘটনা ঘটে। হামলার দুই বছরেরও বেশি সময় পর এই চার্জশিট দেওয়া হলো।

বুধবার বিকেলে পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘শোলাকিয়া জঙ্গি হামলার মামলাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। মামলাটির তদন্তে পুলিশকে নিবিড়ভাবে কাজ করতে হয়েছে। চেকপোস্টে জঙ্গি হামলার ঘটনার নেপথ্যের মাস্টারমাইন্ড, পরিকল্পনাকারী, পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী, অর্থ ও অস্ত্রদাতা এবং সহযোগীদের ব্যাপারে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে হয়েছে। এসব কারণে মামলাটির চার্জশিট তৈরি করতে কিছুটা সময় লেগেছে।’

চার্জশিটে বলা হয়, ২০১৫ সালের জুলাই মাসে মাহফুজুর রহমান বিজয় ওরফে সুজনের ভাড়া বাসায় শোলাকিয়া জঙ্গি হামলার বিষয়ে একটি বৈঠক হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২৪শে জুন রাজধানীর বসুন্ধরায় এপোলো হাসপাতালের পেছনে তানভীর কাদেরীর বাসায় শোলাকিয়া হামলার পরিকল্পনা হয়। এই পরিকল্পনায় রাজীব গান্ধী, তামিম চৌধুরী, সারোয়ার জাহান, নূরুল ইসলাম মারজান, বাশারুজ্জামান চকলেট, তানভীর কাদেরী, খাইরুল ইসলাম ওরফে বাধন ওরফে পায়েল, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিমল ওরফে নাহিদ, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিব্রাস ইসলাম, মীর সামেহ মোবাশ্বের ও মেজর জাহিদ উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে হামলার তিন দিন আগে ৪ জুলাই মিরপুর শেওড়া পাড়ার একটি বাসায় নূরুল ইসলাম মারজান, সারোয়ার জাহান ওরফে আব্দুর রহমান ও রাজীব গান্ধী এই তিন জঙ্গি শোলাকিয়া হামলার বিষয়ে আরও একটি পরিকল্পনা মিটিং করেন। ওই মিটিংয়েই শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদকে হত্যা করা হবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়।

চার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়, শোলাকিয়া হামলায় খরচের যাবতীয় টাকা হুন্ডির মাধ্যমে সিরিয়া, সৌদি আরব ও পাকিস্তান থেকে আসে। এ ছাড়া ভারত থেকে আসে অস্ত্র ও গোলা বারুদ। শোলাকিয়া চেকপোস্টে জঙ্গি হামলার এই ঘটনায় পুলিশের চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করা পাকুন্দিয়া থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সামসুদ্দীন বাদী হয়ে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক হওয়া জঙ্গি শফিউল এবং ঘটনাস্থল এলাকার একটি বাসা থেকে আটক স্থানীয় তরুণ তানিমের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে সদর থানায় ১০ জুলাই মামলা করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আরিফুর রহমান জানান, শোলাকিয়া হামলায় জড়িত ২৪ জঙ্গির মধ্যে ১৯ জঙ্গি দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। অভিযোগপত্রে তাদের অব্যাহতি দিয়ে বাকি পাঁচজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।