দফা দফায় নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়েও সীমাহীন অনিয়ম, দূর্নীতি ও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ব্রীজ তৈরি করার ফলে শেষ রক্ষা হলো না লালমনিরহাটের দ্বিতীয় তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়ক ও সেতুর। ফলে উদ্বোধনের দু’দিন আগেই সংযোগ সড়ক ও সেতু তিস্তার প্রবল স্রোতে ধসে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

১৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অথচ বৃহস্পতিবার দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে মুল সেতুর উত্তর অংশের ইচলি এলাকায় একটি ৬০ফিট দীর্ঘ সংযোগ সেতুর মুখ ধসে গেছে, ভেঙ্গে গেছে সংযোগ সড়কও। ফলে রংপুরের সাথে লালমনিরহাটের ৪টি উপজেলার মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্যাপক অনিয়ম আর নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় লালমনিরহাট- রংপুর বিভাগের মানুষের স্বপ্নের দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু উদ্বোধনের আগেই সংযোগ সড়ক সেতুতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে । স্থানীয়দের অভিযোগ এলজিইডি বিভাগের দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী জাকিউর রহমান, পারভেজ নেওয়াজ খানের সহায়তায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি দায়সারাভাবে কাজ করার কারনে সংযোগ সড়ক ও সেতু ধসে গেল। নদীর পাড়ের মানুষের অভিযোগ সেতু এবং সংযোগ সড়ক নির্মানে ব্যাপক অনিয়ম করে সরকারের বিপুল পরিমান অর্থ অপচয় করা হয়েছে। প্রকৌশলীরা কাজের সঠিক তদারকি না করেই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এই সেতু ও সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী একাধিকবার প্রতিবাদ করেও কোন প্রতিকার পায়নি। বরং মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীরা অনিয়মকে নিয়ম হিসেবে জায়েজ করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

নিম্নমানের কাজকে বৈধতা দেয়ার জন্য সড়ক নির্মানে তিন দফায় মোট ১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যায় করা হলেও উদ্বোধনের ঠিক দুই আগে তিস্তা প্রবল স্রোতে দ্বিতীয় সড়ক সেতুর সংযোগ সড়ক ও সংযোগ সেতুতে ভয়ারহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বর্তমান বালুর বস্তা ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে প্রকাশ, রংপুর-লালমনিরহাট জেলার মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে তিস্তা নদীর ওপর ৮৫০ মিটার দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর নির্মাণকাজ ২০১২ সালে লালমনিরহাট কালেক্টরেট মাঠের জনসভা থেকে উদ্বোধন ঘোষনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

লালমনিরহাটের চারটি উপজেলাসহ বৃহত্তর রংপুরের প্রায় ৫০ লাখ মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল কাকিনা-মহিপুর দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু। ২০১৪ সালের ৩১ জুন নির্মান কাজ শেষ করার প্রতিশ্রæতি দিলেও দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর সেতুর নির্মান কাজ শেষ করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কন্সট্রাকশন। এরই মধ্যে সেতুর কাজ বুঝে নিয়েছেন সরকারী বাস্তবায়নকারী বিভাগ এলজিইডি।

জানা গেছে, ১২৩ কোটি ৮৬লাখ টাকা ব্যায়ে ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুটি নির্মিত। একই অর্থে সেতুটি রক্ষার জন্য উভয় পাশে ১৩০০ মিটার নদী শাসন বাঁধ নির্মান করা হয়েছে। সেতুর সাথে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কের কাকিনা থেকে সেতু পর্যন্ত ৫.২৮০ কিলোমিটার সড়ক নির্মানে দুইটি প্যাকেজে ৪ কোটি ৪৬ লাখ এবং এ সড়কে ২টি ব্রীজ ও তিনটি কালভার্ট নির্মানে ৩টি প্যাকেজে ৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যায় হয়। সেতু থেকে রংপুরের অংশে ৫৬৩ মিটার সড়ক নির্মানে ব্যায় হয় এক কোটি ৪২ লাখ টাকা। এ সেতু বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর। আর এ কাজের অগ্রগতি মনিটরিং করা হয় লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে ।

২০১৪ সালের ৩১ জুন নির্মান কাজ শেষ করার আশ্বাস দেয়া হলে আবারো দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর সেতুর নির্মান কাজ সম্পন্ন করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কন্সট্রাকশন। এরই মধ্যে সেতুর কাজ বুঝে দিয়েছেন বাস্তবায়নকারী সংস্থা এলজিইডি বিভাগকে।

স্থানীয় লোকজন জানান, ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কে দুই ফিট এটেল মাটি দেয়ার কথা থাকলেও শুধু বালুর উপর খোয়া দিয়ে দায়সাড়া কাজ করায় সামান্য বৃষ্টি হলেই ধ্বসে যাচ্ছে সড়ক। ব্যবহৃত খোয়ার গুনগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুললেও সুফল পাননি স্থানীয়রা। ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মানেও বিস্তর অনিয়ম থাকলেও টাকার জোরে স্থানীয় প্রকৌশলীরা সব কিছু বৈধ করে নিয়েছেন বলে এলাকাবাসীরা জানান ।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ব্রীজটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই জনগনের চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কন্সট্রাকশন এর ম্যানেজার প্রবীর কুমার বিশ্বাস নিম্নমানের কাজ করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা সেতুর কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করে এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে বূঝিয়ে দিয়েছি ।