কর্মক্ষমতার অবনতি, ক্ষয় রোগ, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, যকৃতের তীব্র প্রদাহ, রক্ত দূষণ, হাঁড় ও দাঁতের ক্ষয়,ব্রংকাইটিস,হৃদরোগ,এইডস ও প্রজননতন্ত্রের সমস্যাসহ নানা জটিলতা ও দুরারোগ্যব্যাধিতে ভুগেন মাদকাসক্ত ব্যাক্তিরা |এছাড়াও ঠোঁট,মুখ,দাঁতের মাড়ি,খাদ্যনালী এবং শ্বাসনালীতে ক্যান্সার, পুরুষত্বহীনতা, গর্ভের সন্তান বিকলাঙ্গ হওয়ার মত ঘটনা ঘটে মাদকাসক্তব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে মাদক গ্রহনের ফলে |বিশ্বে প্রতি বছর ১০ লাখের বেশি লোক ধুমপানের কারনে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। ফুসফুস ক্যান্সারে যত লোক মারা যায় তাদের ৮৫ % এর মতধুমপায়ী। ব্রংকাইটিস ও হৃদরোগ হল ধুমপায়ীদের স্বাভাবিক অসুখ।

এছাড়া মাদকাসক্তির ফলে পারিবারিক এবং সামাজিক কলহ লেগেই থাকে | বিবাহ বিচ্ছেদের একটি অন্যতম কারন মাদক | মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা নিজের বাবা মাকে খুন করতেও দ্বিধাবোধ করেননা | যার জ্বলন্ত উদাহরণ ঐশি, যিনি ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট মাদকাসক্ত অবস্থায় নিজের বাবা মাকে পর্যন্ত খুন করেছিলেন| মাদকের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি অর্থের জোগান দিতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা|

মূলত একজন ছেলে কিংবা মেয়ে পারিবরিক কলহ,অর্থনৈতিক অভাব,মাদকাসক্ত বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে চলাফেরা,হতাশা,মাদকের প্রতি উৎসাহ,রাজনীতি কিংবা প্রেমে ব্যর্থতা এবং নোংরা সংস্কৃতির কবলে পড়ে মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং নিজেকে মৃত্যুর বুকে ঠেলে দেন ।কোনো মাদকসেবীকে যদি বলা হয় আপনাকে একটি অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হবে যার ফলে আপনি কিছুদিন পরে মারা যাবেন বিষয়টি তিনিও মানতে রাজি হবেন না অথচ তিনি উপলব্ধি করতে পারছেন না কিংবা করছেন না তিনি যে নিজেকে সে অস্ত্র দিয়ে হত্যা করছেন ।তাই প্রথমত একজন মাদকাসক্তকে প্রথমে উপলব্ধি করতে হবে তার মাদক গ্রহনের পূর্বের জীবন এবং বর্তমান জীবনের অবস্থা সম্পর্কে। তার শরীরে যেসকল রোগ বাসা বেঁধেছে তার কারন কি সে সম্পর্কে ।কারন আত্ম উপলব্ধি এবং সুবোধের উদয় না হলে কোনো মাদকাসক্তকে মাদক থেকে দূরে রাখা সম্ভব নয় |

মাদকের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষনা করার ফলে বিচার বহির্ভূত ২১৩ জন নিহত হয় ।তবে এক্ষেত্রে শুধু ডালপালা ছাঁটার সংখ্যাই বেশি ।তাই মাদক নিমূলে মূল শিকড়দের আগে আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিৎ এবং তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ নতুবা মাদক নির্মূল করা সম্ভব নয়|কারন তারা ই এদেশে মাদকসেবীদের হাতের মুঠোয় মাদক পুরে দিচ্ছেন আর সহজলভ্যতা হওয়ার কারনে যে কেউ মাদক গ্রহন করতে পারছেন এবং মাদকাসক্ত হচ্ছেন |

ধর্মীয় এবং নৈতিক শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটাতে হবে প্রসঙ্গত, মাদক গ্রহনের শাস্তি এবং ইসলামের দৃষ্টিতে মাদক বিষয়ক কুরআন এবং হাদিসের পাতা থেকে কিছু বাণী উদ্ধৃত করা যেতে পারে |

যেমনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَ كُلُّ خَمْرٍ حَرَامٌ ‘প্রত্যেক নেশাদার দ্রব্যই মদ আর যাবতীয় মদই হারাম’।(মুসলিম,মিশকাত হা/৩৬৩৮ )

আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনের সুরা আল বাক্বারার ২১৯ নং আয়াতে ঘোষণা করেন, ‘তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। হে নবী! আপনি বলে দিন, এতদুভয়ের মাঝেরয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্য উপকারিতাও রয়েছে। তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়’ ।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের সুরা মায়েদাতে আরো বলেন ,“হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের কার্য বৈ কিছু নয়। অতএব এগুলোথেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ তৈরি করে দিতে এবং আল্লাহকে স্মরণ ও সালাতথেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব তোমরা এখন কি নিবৃত্ত হবে?” (মায়েদা ৯০-৯১)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, প্রত্যেক নেশা আনয়নকারী বস্তু মদের শামিল এবং প্রত্যেক নেশা আনয়নকারী বস্তু হারাম। যে ব্যক্তি দুনিয়ায় মদ পান করবে,অতঃপর তওবা না করে মদ্যপানের অভ্যাস নিয়ে মৃত্যুবরণ করবে, সে পরকালে (জান্নাতের) মদ পান করতে পারবে না ’ -(মুসলিম)।

হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদিসে তিঁনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাদকাসক্ত ক্ষেত্রে দশ ধরণের ব্যক্তিকে অভিসম্পাত করেছেন। এক. মদ প্রস্তুতকারী, দুই.যার নিমিত্তে মদ তৈরি করা হয়, তিন. মদ পানকারী, চার. মদ বহনকারী, পাঁচ. যার নিকট মদ বহন করে নেওয়া হয়, ছয়. মদ পরিবেশনকারী, সাত. মদ বিক্রেতা, আট. মদের মূল্যভোগকারী ব্যক্তি, নয়. মদ তৈরি করার আসবাব ক্রয়কারী ব্যক্তি, দশ. মদের নিমিত্তে যা ক্রয় করা হয়’ ( ইবনে মাজাহ)।

মাদক সরবরাহকারী,মাদকের পিছনে বিনিয়োগকারী,পৃষ্ঠপোষক,মদদদাতা,সহায়তাকারী ও প্ররোচনাকারী এই ছয় ধরনের অপরাধের শাস্তি মুত্যুদন্ড রেখে নতুন যে আইনটির খসড়া করা হয়েছে,সেটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায় |সর্বোপরি নিজেকে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচাতে ,পারিবারিক,সামাজিক,অর্থনৈতিক এবং পারলৌকিক সুখ লাভের নিমিত্তে মাদকাসক্ত ব্যক্তির আত্মউপলোব্ধির মাধ্যমে নিজে থেকে ধীরে ধীরে অভ্যাসের পরিবর্তনের করে ফিরে আসলেই এ অভিশাপ থেকে মুক্তি মিলতে পারে ‍|

লেখক ঃ মুহাম্মদ হাসান মাহমুদ ইলিয়াস

শিক্ষার্থী,দর্শন বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় .

আবাসিক শিক্ষার্থী ,স্যার এ.এফ.রহমান হল,ঢাবি.