নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহর থেকে গুলিবিদ্ধ তিন যুবকের পরিচয় মিলেছে। নিহতরা হলেন, রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকার শহীদুল্লাহর ছেলে সোহাগ ভুইয়া (৩২), মুগদা মান্ডা এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে শিমুল আজাদ (৩০)। একই এলাকার আব্দুল ওয়াহাবের ছেলে ও শিমুল আজাদের ভায়রা নুর হোসেন বাবু (৩০)। তার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ির এলাকায়।

স্বজনদের দাবি, বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর)শিমুল আজাদেও গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ বেড়াতে যাওয়ার জন্য বের হয় তিনজন। যাওয়ার পথে মাওয়া ফেরী পার হওয়ার পর ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাদেরকে যাত্রীবাহী বাস থেকে নামিয়ে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ ছিলেন।

এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকালে পূর্বাচল উপশহরের আলমপুর এলাকার ১১ নং ব্রিজ এলাকায় সড়কের পাশে তিন যুবকের লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকার লোকজন পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ খবর পেয়ে ওই এলাকা থেকে তিন যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে। খবর পেয়ে নিহতের স্বজনেরা রূপগঞ্জ থানায় ছুটে আসেন। তারা স্বজনদের এসে নিহতের লাশ শনাক্ত করেন।

শিমুলের স্ত্রী আয়েশা আক্তার আন্না বলেন, বুধবার বেড়াতে যাওয়ার পথে ডিবি পুলিশ পরিচয় তাদেরকে যাত্রীবাহী বাস থেকে নামিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ ছিল। তারা কোনও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।নিহত তিনজনই বন্ধু ছিলেন। তারা রাজধানীতে ঝুটের (ওস্টেজ কাপড়ের টুকরার) ব্যবসা করতেন।

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান মনির জানান, নিহতদের মাথা ও শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, হত্যার পর লাশগুলো যাওয়া হয় ওই এলাকায়। নিহত একজনের পকেট থেকে ৬৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের স্বজনেরা লাশ শনাক্ত করেছেন।রূপগঞ্জ থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনির বলেন, তিন যুবকের পরনে ছিল প্যান্ট, শার্ট ও গেঞ্জি। দেখে মনে হয়েছে অন্য কোথাও হত্যার পর লাশগুলো এখানে ফেলে যাওয়া হয়েছে।

নিহতদের পরিচয় পুলিশ সকালে জানাতে না পারলেও পরে পরিবারের সদস্যরা নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে এসে লাশ শনাক্ত করেন।এর মধ্যে সোহাগের লাশ শনাক্ত করেন তার ভাই মো. শাওন। তিনি জানান, সোহাগ ঢাকার মহাখালী এলাকায় স্যাটেলাইট কেবল নেটওয়ার্কের ব্যবসা করার পাশাপাশি ফাস্ট ফুডের দোকান চালাতেন।আর বাকি দুজনের লাশ শনাক্ত করেন শিমুলের স্ত্রী আয়েশা আক্তার আন্নি। তিনি বলছেন, তার স্বামী ছোটখাটো ব্যবসা’ করতেন। তাদের একটি মেয়ে রয়েছে।শাওন হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, গত বুধবার থেকে সোহাগের কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না তারা। সকালে ফেইসবুকে লাশ উদ্ধারের খবর আর ছবি দেখে তারা নারায়ণগঞ্জে ছুটে আসেন।

আর আন্নি বলেন,বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলেন তার স্বামী।পথে দৌলতদিয়া ঘাটে একটি বাস থেকে তাদের ডিবি পুলিশ পরিচয়ে’ ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তারপর থেকে শিমুলের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি তারা।পরিবারের এই অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রূপগঞ্জ থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, সেখানে জেলা পুলিশের কোনো অভিয়ান চালানো হয়নি। অন্য কোনো বাহিনী তাদের আটক করেছিল কি না, সে তথ্য আমাদের কাছে নেই।স্বজনরা এ বিষয়ে থানায় মামলা করতে চাইলে পুলিশ সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বলে জানান ওসি।