াজীপুরের আলোচিত শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান ইন্দোনেশিয়ায় সরকারী সফর শেষে সোমবার নিজ কার্যালয়ে যোগদান করেছেন। তার যোগদানের খবর পেয়ে এদিন দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজ মুক্ত পৌরসভার দাবীতে মানববন্ধন করেছে শ্রীপুর পৌরসভা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।

জানা গেছে, গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র ও গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান গত ৮ সেপ্টেম্বর ৯ দিনের সরকারি সফরে ইন্দোনেশিয়া যান। তার বিরুদ্ধে শ্রীপুর পৌরসভার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলা রয়েছে। তিনি বিদেশ যাওয়ার পরদিন ৯ সেপ্টেম্বর নূরে আলম মোল্লা নামের এক ব্যাক্তি নিজেকে শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ মিজানুর রহমান খানের আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে দুদকের চার মামলায় জামিনের আবেদন করেন। আদালত তাকে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় এক মামলায় জামিন দেন। তবে তিন মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। মেয়র আনিছুর রহমানের অনুপস্থিতিতে তার বদলী হাজিরা দিতে গিয়ে নূরে আলম মোল্লা গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা প্রকাশ পেলে সর্বত্র ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠে। ৯ দিনের সরকারি সফর শেষে ১৬ সেপ্টেম্বর (রবিবার) ইন্দোনেশিয়া থেকে দেশে ফিরেন শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান। পরদিন সোমবার তিনি নিজ কার্যালয়ে যোগদান করেন। এসময় পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে শুভেচ্ছা জানান।

এদিকে শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমানের যোগদানের খবর পেয়ে শ্রীপুর পৌরসভা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজ মুক্ত পৌরসভার দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের সামনে সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘন্টা ব্যাপী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা “রাস্তা নাই ভোট চাই, পৌরবাসী উন্নয়ন বঞ্চিত কেন জবাব চাই, লুটপাট বন্ধ করো” ইত্যাদি লেখা সম্বলিত ফেস্টুন নিয়ে যোগ দেন। এসময় শ্রীপুর গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন, শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকিরুল হাসান জিকু, শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান হিমু ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বুলবুল প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা দাবী করেন শ্রীপুর পৌরসভা একটি দালালচক্রের মাধ্যমে দুর্নীতি করে যাচ্ছে। রাস্তাঘাট দীর্ঘদিন সংষ্কার না করা, হালকা যানবাহন থেকে অতিরিক্ত টোল আদায়সহ নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরেন।

এ প্রসঙ্গে মেয়র আনিছুর রহমান জানান, প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে একটি মহল পৌর নাগরিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে নানা ষড়যন্ত্র করছে। যার উদ্যোগে মানববন্ধনটি হয়েছে সে কোনো সুস্থ লোক কিনা তা আগে যাচাই করা দরকার। মাদকাসক্ত হয়ে থাকলে তার চিকিৎসা করা দরকার। তারা কোন ¯্রােতের তাও দেখতে হবে।

মামলার অভিযোগে সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে শ্রীপুর পৌরসভার অন্তর্গত ৫টি হাট-বাজার থেকে ৭ লাখ ৩৫ হাজার ২শ’ টাকা আত্মসাত করেন আসামিরা। ওই ঘটনায় ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম মামলাটি দায়ের করেন। ২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মামলাটি তদন্ত করে চার্জশীট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক ইকবাল হোসেন।

অপর তিন মামলার অভিযোগে বলা হয়, পৌরসভার রশিদের মাধ্যমে আদায়কৃত ট্যাক্স ও বিবরণীর ৪৩ লাখ ৭৬ হাজার ১০৭ টাকা পৌরসভার তহবিলে জমা না করে আত্মসাত করা হয়। ওই ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম মামলা দায়ের করেন। তদন্ত কর্মকর্তা ২০১৬ সালের ১২ জুলাই চার্জশীট দাখিল করেন। অন্য দুই মামলায়ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।