গাজীপুরের এক মাদ্রাসায় মঙ্গলবার ভোরে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা হলো গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের চান্দনা এলাকার হুফ্ফাজুল কোরআন মাদ্রাসার পরিচালক মো. ইব্রাহিম খলিলের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার (২১) ও ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানার ছয়ানি রসুলপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে ওই মাদ্রাসার নুরানী বিভাগের ছাত্র মো. মামুন (৮)। এ ঘটনায় নিহত মাহমুদার শিশু সন্তান আবু হুরায়রা (৩) আহত হয়েছে।

নিহতের স্বামী ইব্রাহিম খলিল জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের চান্দনা এলাকার রাশেদুল ইসলাম রাজিবের বাড়ি ভাড়া নিয়ে গত এক বছর ধরে হুফ্ফাজুল কোরআন মাদ্রাসা নামের হেফজ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে তা পরিচালনা ও শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন টাঙ্গাইলের কালিহাতি থানার বাশজানা মালতি গ্রামের ফজলুল হোসেনের ছেলে ক্কারী মোঃ ইব্রাহীম খলিল। মাদ্রাসার একটি কক্ষে দ্বিতীয় স্ত্রী মাহমুদা আক্তার (২১) এবং দু’ শিশু সন্তান আবু হুজাইফা (৫) ও আবু হুরায়রাকে (৩) নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। মঙ্গলবার ভোরে স্ত্রী মাহমুদা ও তার দুই সন্তান এবং মাদ্রাসার দুই ছাত্র মামুন ও আব্দুল্লাহকে রেখে তিনি পাশের মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হন। এসময় পায়খানা থেকে ঘরে ফিরে আব্দুল্লাহ বিছানার উপর মাহমুদা এবং দরজার সামনে মামুনের ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে। এসময় পাশেই মাহমুদার আহত শিশু সন্তান আবু হুরায়রা (৩) কান্না করছিল। খবর পেয়ে মসজিদ থেকে বাসায় ফিরে হতাহতদের দেখতে পান। এ বিষয়ে তিনি আর কিছুই জানেন না বলে জানান।

নিহত মামুনের বাবা শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি গফরগাঁয়ের একটি ডেইরী খামারে কাজ করে। মঙ্গলবার ভোরে সন্তান নিহত হওয়ার খবর পেয়ে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে মামুনের লাশ সনাক্ত করেন। তবে কেন মামুনকে হত্যা করা হয়েছে তা তিনি জানেন না। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবী জানান।

জিএমপি’র বাসন থানার ওসি মো. মুক্তার হোসেন জানান, মঙ্গলবার সকালে চান্দনা এলাকায় জোড়া খুনের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং নিহতদের লাশ দু’টি উদ্ধার করে। পুলিশ এসময় বিছানার পাশ থেকে রক্তমাখা একটি দা এবং পাশের কক্ষ থেকে দা ধারালো করার কাজে ব্যবহৃত একটি কাঠের খন্ড ও বালু উদ্ধার করেছে। লাশ দু’টি মাদ্রাসার পরিচালক মো. ইব্রাহিম খলিলের বসত ঘরে পড়েছিল। নিহত মাহমুদার গলায়, গালে ও কানে এবং মামুনের ঘাড়ে, মাথায় ও পিঠে ধারোলো অস্ত্রের একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়াও আহত শিশু আবু হুরায়রার ডান হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

এব্যাপারে বাসন থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা এসআই আল আমিন মাদ্রাসার ছাত্র সাব্বিরের বরাত দিয়ে জানান, সোমবার রাতে হুজুরকে (ইব্রাহিমকে) উদ্ধার হওয়া দা’টি ধার দিতে দেখেছে। আর মঙ্গলবার ভোরে ফজরের নামাজে যাওয়ার আগে সাব্বিরকে দিয়ে মামুনকে (নিহত) মাদ্রাসার অন্য কক্ষ থেকে হুজুরের কক্ষে ডেকে আনায়। এসময় অন্য শিক্ষার্থীরা নামাজের জন্য মসজিদে চলে যায়। মাদ্রাসার পরিচালক এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন।

উল্লেখ্য, গত ১৬ সেপ্টেম্বর নব গঠিত গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) এর কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের একদিন পরই মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটেছে।