বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার জনগণকে ত্যাজ্য করে জালিয়াতির মেশিন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম)ওপর নির্ভরশীল হয়েছে। সরকারের নির্বাচন দরকার, কিন্তু ভোট দরকার নেই; গণতন্ত্রের মুখোশ দরকার, কিন্তু বিরোধী দলের দরকার নেই; গণমাধ্যম দরকার, কিন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতার দরকার নেই।

বুধবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।রিজভী বলেন, পুনরায় ক্ষমতা লাভের কাড়াকাড়িতে ব্যস্ত সরকারের কাছে ইভিএম কেনা অত্যন্ত জরুরি এ জন্য যে, এই মেশিন ভোট গ্রহণের দিন ব্যবহার হলে ভোটারদের প্রয়োজন হবে না। ইভিএম নিয়ে বিশ্বময় অশান্তি ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তাড়াহুড়া করে বহুল আলোচিত ইভিএম কেনার জন্য তিন হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। অন্যদিকে একনেকে এ প্রকল্প অনুমোদন হওয়ারও বেশ কিছুদিন আগে সরকারের দুজন কর্মকর্তা ইভিএম ক্রয় করতে বিদেশ গেছেন।ইভিএম কেনার পেছনে সরকারের দুটি উদ্দেশ্য কাজ করছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, প্রথমটি হচ্ছে ভোটারবিহীন কারচুপির নির্বাচন, দ্বিতীয়টি হচ্ছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া।সরকারদলীয়দের অর্থ আত্মসাতের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী জোট সরকার হরিলুটের সরকার। ব্রিজ, কালভার্ট, সড়ক-মহাসড়ক, উড়াল সেতুর নির্মাণে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় বৃদ্ধি করে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা জনগণের টাকা লোপাট করে যাচ্ছে। অবৈধ সরকার দলীয় লোকদের আঙুল ফুলে কলাগাছ বানাতে রাষ্ট্রীয় অর্থভাণ্ডার ডাকাতির সুযোগ করে দিয়েছে বলে এ সময় দাবি করেন তিনি।

বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে একের পর এক মামলা ও হয়রানির প্রসঙ্গ এনে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আরো বলেন, ভোটারবিহীন সরকার নিজস্ব ভঙ্গিতে একটা অভিনব নির্বাচন করতে চাইছে। নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা হবে, মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই, প্রত্যাহার এমনকি ভোট গ্রহণের দিনও এসে পড়বে, শুধু ভোটকেন্দ্রে ভোটার থাকবে না। আর বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের থাকতে হবে কারাগারে অথবা পলাতক হয়ে। বর্তমান অবৈধ সরকার সব কাজ বাদ দিয়ে এখন একটা কাজই করছে, তা হলো দেশজুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গণমামলা ও গণগ্রেপ্তার।পান থেকে চুন না খসলেও শুধু অজানা ভয়ে সরকারের পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে দাবি করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আসলে আগামী নির্বাচন নিয়ে নেপথ্য লোকের বার্তাই হচ্ছে একতরফা নির্বাচন। আর সে জন্যই দেশব্যাপী বিএনপির নেতাকর্মীদের ছেঁকে তুলতে বিশাল জাল বিস্তার করা হয়েছে।উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছড়ানো আতঙ্কের আড়ালে নীরবে জনগণের সোচ্চার উচ্চারণ সংগঠিত হচ্ছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, এই আওয়াজ গণতন্ত্র বিনাশকারী অপশক্তির বিরুদ্ধে বিজয় না হওয়া পর্যন্ত চলতেই থাকবে। এ সময় তিনি নিজ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অবিলম্বে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান তিনি।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসাসেবা দিতে নানাভাবে বাধা দিচ্ছে সরকার।দেশনেত্রীকে আগে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দিতেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের একজন সিনিয়র অভিজ্ঞ থেরাপিস্ট। পরে তাঁকে পরিবর্তন করে সরকারদলীয় মনোভাবাপন্ন একজন নতুন ও অনভিজ্ঞ থেরাপিস্টকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ওই ব্যাপারটিকে রহস্যজনক হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের মেডিকেল বোর্ডে রাখা হয়নি দাবি করে রিজভী আরো বলেন, এ জন্যই আমরা দেশনেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। বিএনপি চেয়ারপারসন গুরুতর অসুস্থ হলেও এখনও তাঁকে তাঁর পছন্দ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি কিংবা সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এতে প্রমাণিত হয় যে সরকার খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে কোনো গভীর চক্রান্ত চালাচ্ছে।প্রত্যেক বন্দি মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে, অধিকার রয়েছে পছন্দ অনুযায়ী হাসপাতাল ও চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেওয়ার। অথচ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মানবাধিকারকে হরণ করে তাঁকে তীব্র কষ্ট দিয়ে তিলে তিলে তাঁর জীবন বিপন্ন করার ষড়যন্ত্রে সরকার লিপ্ত রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন রুহুল কবির রিজভী। এ সময় খালেদা জিয়াকে তাঁর পছন্দ অনুযায়ী বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালে, বিশেষ করে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার জোর দাবি জানান তিনি।