সরকারি চাকরিতে প্রবেশে প্রতিবন্ধীদের এক শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংদীয় কমিটি। বুধবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এই সুপারিশ করা হয়।সংসদ সচিবালয়ের এক সংবিাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে (৯ম ও ১০ম গ্রেড) কোনও ধরনের কোটা না রেখে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করতে সরকার গঠিত কমিটির সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার একদিনের মাথায় সংসদীয় কমিটির এই সুপারিশ এলো।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিবন্ধী আইনে দেওয়া সুবিধার প্রতিফলন ঘটাতে ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়কে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়।

বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সাংবদিকদের বলেন, আইনে প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় চাকরিতে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা রয়েছে। আইন সংশোধন না করে কোটা বাতিল করা যাবে না। প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন সংশোধন না করে কোটা বাতিল করলে আইনের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত; এরমধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।এই প্রসঙ্গে সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, কোটা পর্যালোচনায় গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত যে প্রাথমিক নিয়োগ হয়, সে নিয়োগে কোনও কোটা না রাখার সুপারিশ করেছে। কমিটির এই সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেলে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেলে আগামী মাসেই তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হতে পারে বলেও তিনি জানান।

সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার পরিমাণ ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে কয়েক মাস আগে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। তাদের সেই আন্দোলন ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে।আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল সংসদে বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতিই আর রাখা হবে না। তবে পরে সংসদে তিনি বলেন, কোটা পদ্ধতি থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ রাখতে হাই কোর্টের রায় আছে।

এছাড়া বৈঠকে গাজীপুরে অবস্থিত নারী, শিশু ও কিশোরীদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রের (সেফ হোম) নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়।বৈঠকে জানানো হয় যে, বর্তমানে বাংলাদেশে হিজড়ার সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। কমিটি স্বল্পসংখ্যক এ সব হিজড়াকে সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে তাদের শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া, যুবা হিজড়াদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, প্রশিক্ষণোত্তর আর্থিক সহায়তা দেওয়া, প্রবীণ হিজড়াদের বিশেষ ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং পৈতৃক সম্পত্তির ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার পথকে সুগম করতে মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে।

কমিটির সভাপতি মো. রমাজাম্মেল হোসেনের সভাপতি বৈঠকে কমিটির সদস্য ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, মনোরঞ্জন শীল গোপাল, মো. হাবিবে মিল্লাত, শেখ হাফিজুর রহমান, আব্দুল মতিন, লুৎফা তাহের ও সৈয়দা সায়রা মহসীন অংশ নেন।