প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকতা পেশাকে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে কখনো বালকসুলভভাবে ব্যবহার করা উচিত নয়। আমরা সংবাদপত্রের পূর্ণ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। কিন্তু এটাকে বালখিল্যভাবে ব্যবহার করা উচিত নয় এবং সবারই এ ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট হতে অসুস্থ, অসচ্ছল ও দুর্ঘটনাজনিত আহত ও নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের অনুকূলে আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।

জাতির পিতা সাংবাদিকদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, স্বাধীনতা ভালো। তবে এখানে একটা কথা আছে, স্বাধীনতা ভালো, তবে তা বালকের জন্য নয়। কাজেই এ ধরনের বালখিল্য ব্যবহার যেন কেউ না করে, সেদিকেও দৃষ্টি দেওয়া উচিত।সরকার প্রধান বলেন, অন্তত গঠনমূলক দায়িত্বশীল ভূমিকাটা পালন করা, যেটা দেশের কল্যাণের কাজে লাগবে। এটা হচ্ছে বাস্তবতা, আমি আশা করি, নিশ্চয়ই সেটা আপনারা অনুভব করবেন। ২০০৮-এর নির্বাচনে দিন বদলের যে অঙ্গীকার করেছিলাম, আমি মনে করি নিশ্চয়ই আপনারা এটা স্বীকার করবেন আজকে মানুষের দিন বদল হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে দেখার,জানার জন্য জীবনে যত রকম ঝুঁকি নেওয়ার নিয়েছি এবং সুযোগ পেলে কীভাবে করব, সেই পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছি বলেই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে আমরা মহাকাশও জয় করেছি, সমুদ্র সীমানা ঠিক করেছি, আবার স্থলসীমানা চুক্তির বাস্তবায়ন করেছি। যাই করেছি তার শুরুটা করে দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।এই সময়ে জাতির পিতার সাড়ে তিন বছরের শাসনে যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রদেশকে একটি দেশ হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি এত পরিমাণ কাজ তিনি সম্পাদন করেছেন, যা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ শেষ করে যাওয়াই তাঁর কর্তব্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সমালোচকদের উদ্দেশে বলেন, আমার পক্ষে, বিপক্ষে মিডিয়ায় কে কী লিখল, না লিখল আমি চিন্তা করি না। আমি চিন্তা করি, আমি যে কাজটা করছি, সেখানে নিজের আত্মবিশ্বাসটা আছে কি না, সঠিক করছি কি না, নিজের আত্মবিশ্বাসের ওপর নির্ভর করেই আমি চলি।

গণমাধ্যমকে সমাজের দর্পণ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিডিয়ার মাধ্যমে সাংবাদিকরা এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলের দুস্থ জনগণের কথা, বিপন্ন জনমানুষের কথা তুলে আনেন, ফলে সরকারের তাঁদের পাশে দাঁড়াতে সুবিধা হয়।সকলের কথা বলার এবং মতপ্রকাশের অধিকার থাকার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কথা বলার স্বাধীনতা, এটা সকলেরই আছে। সংবাদপত্র, সাংবাদিকদের স্বাধীনতার কথায় আমরা সব সময় বিশ্বাস করি। এটা কেউ বলতে পারবে না যে কারো গলা টিপে ধরেছি, কারো মুখ টিপে ধরেছি অথবা কাউকে বাধা দিয়েছি দিইনি, দিই না। বরং সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করা দরকার, আমরা করেছি।অন্যান্য পেশাজীবীর মতো সাংবাদিক কল্যাণকে তাঁর সরকার অগ্রাধিকার দেয় উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, সাংবাদিক কল্যাণে তাঁর সরকার বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট’ স্থাপন করে এর অওতায় অসুস্থ, অসচ্ছল, আহত এবং নিহত সাংবাদিক এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের অনুদান দিয়ে আসছে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে আরো ২০ কোটি টাকা অনুদান প্রদানের ঘোষণা দেন।তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তথ্য প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।তথ্য সচিব মো. আবদুল মালেক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মহাপরিচালক শাহ আলমগীরও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।এ ছাড়া বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি (ডিইউজে) আবু জাফর সূর্য এবং সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরীও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।