অবহেলা বা বেপরোয়া মোটরযান চালনার কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে ৫ বছরের করাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রেখে ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বিল’ সংসদে পাস হয়েছে। একইসঙ্গে প্রাণহানির দায়ে অভিযুক্তদের অপরাধ জামিনযোগ্য নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনাজনিত অন্যান্য অপরাধ আপোষ মিমাংসার জন্য পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের ২২তম অধিবেশনের বুধবারের বৈঠকে বিলটি সংসদের স্থিরিকৃত আকারে পাস করার প্রস্তাব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিল পাসের আগে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, অনেকে শুধু ৫ বছর সাজা দেখেন। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে বা ইচ্ছাকৃতভাবে কোন দুর্ঘটনা প্রমাণিত হলে প্যানাল কোডের ৩০২ ধারা মোতাবেক অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া যাবে।

যাবজ্জীবনেরও বিধান আছে বলে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী উল্লেখ করেন। তবে আইনে বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখিত নেই। এরআগে বিলের ওপর আনীত জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে প্রেরণের প্রস্তাবগুলো কন্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। আইনের ৫দফায় আনীত সংশোধনী গ্রহণ করে হয়। এতে বলা হয় অনুমতিপত্র ছাড়া গণপরিবহণ চালানো যাবেনা। এর সাথে ‘অনুমতিপত্র অহস্তান্তরয়োগ্য হবে এবং অনুপতিপত্রের অধীন রুটে পরিচালিত গণপরিবহণের দায়ভার অনুপতিপত্রের অধিকারীর ওপর ন্যাস্ত হবে-৫ (২) দফায় যুক্ত হবে। এছাড়া আরো তিনটি শব্দগত সংশোধনী গৃহীত হয়। অপরাপর সংশোধনীগুলি কন্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

বিলে অপরাধ, বিচার ও দন্ড অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে প্যানাল কোডের ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৮৮৯-এ ভিন্নতন কিছু না থাকলে, সাব ইনসপেক্টর বা সমমর্যাদার কর্মকর্তা আদলতে অবহিত করলে এ আইনের অধীনে সব অপরাধ আমলযোগ্য হবে। তবে আইনের ৮৪ (মোটরযানের কারিগরি ত্রুটি), ৯৮ (ওভারলোডিং ও বেপরোয়াগতি মোটরযান চালানো) ও ১০৫ (দুর্ঘটনা সংক্রান্ত অপরাধ) অনুচ্ছেদে বর্ণিত অপরাধসমুহ ছাড়া অপর সব অপরাধ জামিনযোগ্য হবে। জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বা অতিরিক্ত সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ বা সমমর্যাদার কর্মকর্তাকে এ আইনের ৬৬(ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো), ৭২ (রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া মোটরযান চালালে), ৭৫ মোটরযানের ফিটনেস না থাকলে), ৮৭ মোটরযানের গতি অনিয়ন্ত্রিত হলে), ৮৯ (ঝুঁকিপূর্ণ মোটরযান চালালে) এবং ৯২ (নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করে গাড়ি চালালে) ধারায় বর্ণিত অপরাধসমুহ আপোষ মিমাংসা করতে পারবেন।

এছাড়া অপরাধসমূহ নির্ধারিত টার্মিনাল চার্জ ব্যতীত পাবলিক প্লেসে মোটরযান চলাচলের জন্য অবৈধভাবে কোন অর্থ আদায় করা যাবে না, করলে প্যানাল কোডের অধীন চাঁদাবাজির অপরাধ বলে গণ্য হবে। তবে বিলে মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বার্ষিক বা এককালীন চাঁদা আদায়ের বিধান রাখা হয়েছে। চাঁদার অর্থ মোটরযান দুঘর্টনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার উত্তরাধিকারীকে ক্ষতিপূরণ বা চিকিৎসা খরচ বাবদ প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে। তবে এজন্য সরকার কর্তৃক আর্থিক সহায়তা তহবিল পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠিত হবে। সরকার ট্রাস্টির চেয়ারম্যান নিয়োগ করবেন এবং এটি একটি স্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠান হবে।

বিলে আরো বলা হয়, লাইসেন্স ছাড়া কোন ব্যক্তি গণপরিবহনে কন্ডাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। শ্রম আইন অনুযায়ী নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান চুক্তিছাড়া কাউকে কন্ডাক্টরও নিয়োগ করতে পারবেনা। গণপরিবহন পরিচালনার জন্য সরকারি গেজেট দ্বারা প্রতিটি মহানগর, বিভাগ এবং জেলায় একটি করে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি গঠিত হবে। কমিটিতে পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক প্রতিনিধি থাকবেন। কমিটি রুট পারমিট প্রদান করবেন।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে আদালতের নিদের্শে মোটর ভেহিক্যাল অর্ডিন্যান্স ১৮৮৩ বাতিল হয়ে গেলে আবশ্যকতা বিবেচনায় ২০১৩ সালের ৭নং আইন দ্বারা এটি কার্যকর রাখা হয়। পরবর্তিতে সময়ের চাহিদা ও নিরাপদ সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ প্রণীত হয়। আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে আইনে ১৪টি অধ্যায়ে ১২৬ ধারা যুক্ত করা হয়েছে।