কালের বিবর্তনে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামাঞ্চলের সেই পরিচিত ঐতিহ্যবাহী ‘হ্যাচাক লাইট বা ম্যান্থল লাইট। সভা-সমাবেশ, বিয়ে, আকিকা, মিলাদ মাহফিল, কবিগান, যাত্রাগান, ওরস শরীফসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে এক সময় এ লাইটের মাধ্যমে আলোর সঞ্চালন করা হতো। এমনকি হ্যাচাক লাইটের জ¦ালিয়ে গ্রামবাংলায় শীতের রাতে ধান খেতে পাখি মারতেও দেখা যেতো। সে সময় হ্যাচাক লাইটের ছিল ব্যাপক চাহিদা। বর্তমানে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ আর সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা। যুগ বিবর্তনে বিদ্যুতের কাছে হার মেনেছে হ্যাচাক বা ম্যান্থল লাইট। তাই এই লাইটের ব্যবহার এখন আর চোখে পড়েনা। বিদ্যুতের যুগে হাট-বাজার ও সামাজিক অনুষ্ঠানে হ্যাচাক লাইটের ব্যবহার না হলেও বর্তমান সেখনে জায়গা করেনিয়েছে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন কোম্পানির বৈদ্যুতিক ও সৌর চার্জার লাইট।

আধুনিক এ সব লাইটের কারণেই হ্যাচাক লাইটের ঐতিহ্য হারাতে চলেছে। এক সময় এই লাইটের ব্যবসা ছিল জমজমাট। মেরামতের জন্য হাট ববাজারে বেশ দোকানও পাওয়া যেত। এখন আর হ্যাচাক লাইট মেরামতের দোকান চোখে পড়ে না। বর্তমান হ্যাচাক লাইটর ব্যবহার না হওয়ায় লাইট মেকারেরা আজ তারা পেশা বদলিয়েছে। যতদূর জানাযায় ব্রিটিশ আমল থেকে এই লাইটের ব্যবহার। ওই সময় জমিদাররা তাদের বাড়ি আলোকিত করতে হ্যাচাক বা ম্যান্থল লাইট ব্যবহার করতেন। সে আমলে এসব ম্যান্থল বা হ্যাচাক লাইট ভাড়াতেও পাওয়া যেতো। কালের পরিক্রমায় বাংলার জমিদার শ্রেণির যেমন বিলুপ্ত ঘটেছে তেমনি বিলুপ্ত হচ্ছে হ্যাচাক বা ম্যান্থল লাইটের। অন্ধকার থেকে রক্ষা পেতে স্বল্প খরচে কেরোসিনের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের লোকজন প্রয়োজনে হ্যাচাক লাইট জ্বালাতেন তাদের বাড়িতে। তারপরেও অন্ধকার থেকে রক্ষা পেতে স্বল্প খরচে কেরোসিনের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের লোকজন প্রয়োজনে লাইটটি জ্বালান। খুলনা জেলা পাইকগাছায় কয়েকটি ম্যান্থল লাইট মেরামতের দোকান রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ম্যান্থল লাইটের চিপনি, ভেপার, চকেট, কক ওয়াসার, কক, পাম্বার, নিপুল, পিন ও তেল ছাড়ার চাবির দাম দিন দিন বাড়ছে। খুচরা যন্ত্রাংশের অভাব ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিকল্প হিসেবে বৈদ্যুতিক চার্জার লাইট ব্যবহার করছে লোকজন। এখনো হ্যাচাক বা ম্যান্থল লাইট থাকলেও তা এখন আর জ্বালাতে দেখা যায় না। তা এখন শুধুই কালের স্মৃতি বহন করে।