ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সদরের কিছু অংশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ মজিবুর রহমান ওরফে নিক্সন চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক সাংসদ কাজী জাফরউল্লাহর সমর্থকদের মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাত এড়াতে এ উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন।

শুক্রবার রাত ১০টার দিকে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এলাকায় মাইকিং করে এ ১৪৪ ধারা জারির ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই ঘোষণায় বলা হয়, উপজেলা সদরের হাজিডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় আজ শনিবার সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ওই সময়ে ওই এলাকায় কোনো মিছিল, মিটিং, সমাবেশ আয়োজন করা যাবে না এবং চারজনের অতিরিক্ত লোক একসঙ্গে জড়ো হতে পারবে না।এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা তিনটার দিকে হাজিডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কিছু ব্যক্তির সাংসদের সঙ্গে যোগ দেওয়া উপলক্ষে এক জনসভার আয়োজন করেন স্বতন্ত্র সাংসদের সমর্থকেরা। ওই যোগদান অনুষ্ঠানে চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের ছয় নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা এবং সাত নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল জলিল ও তাঁদের সমর্থকদের যোগদান করার কথা ছিল। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল স্বতন্ত্র সাংসদ নিক্সন চৌধুরীর।

জনসভার ওই জায়গা কাজী জাফরউল্লাহর সমর্থক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেনে বাড়ির কাছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সাংসদের জনসভা সফল করে তোলার জন্য এলাকায় মাইক দিয়ে প্রচারকাজ শুরু হয়। ওই দিন বিকেলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের বাড়িতে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক কর্মিসভা আহ্বান করে মাইক দিয়ে প্রচার শুরু হয়।দুটি বিরোধী অংশের একই সময়ে মাত্র দেড় শ গজের মধ্যে দুটি সমাবেশ আয়োজন করার ঘোষণায় এলাকায় দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষাপটে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে।প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, এ দুটি সমাবেশ সফল করার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নেয় দুই পক্ষই। স্কুলমাঠে জনসভা উপলক্ষে মঞ্চ ও তোরণ নির্মাণ করা হয়। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের সম্পাদকের বাড়িতে তাঁবু টানিয়ে চেয়ার পাতার কাজও সম্পন্ন হয়।

স্বতন্ত্র সাংসদের সমর্থক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আলী মোল্লা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ কি এতই দেউলিয়া হয়ে গেছে যে দলের কর্মিসভা উপজেলা সদরে নিজস্ব কার্যালয় বাদ দিয়ে সম্পাদকের বাড়িতে আহ্বান করতে হবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্বতন্ত্র সাংসদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাদের যোগদান অনুষ্ঠান বানচাল করার জন্যই দলের সাধারণ সম্পাদক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সভাস্থলের নিকটবর্তী নিজ বাড়িতে উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মিসভা আহ্বান করেছেন। তিনি বলেন, আজকের যোগদান অনুষ্ঠানসহ সাংসদ যেসব কর্মসূচি দিয়েছেন, তা সবই করা হবে।উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কাওসার বলেন, যে স্কুলের মাঠে সাংসদের সভা আয়োজন করা হয়েছে, সেটি আমার বাড়ির মধ্যে অবস্থিত। ওই স্কুল আমার বাবা করেছেন। ওই স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আমার ভাই। স্কুলের মাঠ বলে কিছু নেই। যা আছে তা আমাদের বাড়িরই অংশ। আমার বাড়ির ওপরে যদি তিনি মিটিং না ডাকতেন, তাহলে কোনো সমস্যা ছিল না। উনি এমপি হিসেবে আমার এলাকায়, আমার বাড়িতে আসতেই পারেন, কিন্তু আমার বাড়িতে কেন জনসভা করবেন?এ জনসভার জন্য স্কুল কমিটির সভাপতির কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি’ দাবি করে মো. কাওসার বলেন, আমাকে আত্মরক্ষার জন্যই এ কর্মিসমাবেশের আয়োজন করতে হয়েছে। তিনি বলেন, যেখানে মঞ্চ করা হয়েছে, সেটা আমার দাদির কবর থেকে মাত্র নয় হাত দূরে। তিনি সভাস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করায় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুন্নাহার বলেন, একই সময়ে দুটি পরস্পরবিরোধী দলের প্রায় স্বল্প দূরত্বে সমাবেশ আয়োজন করায় শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হতে পারে—এ শঙ্কায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।প্রসঙ্গত, ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন নিয়ে ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসন গঠিত। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাংসদ নির্বাচিত হন নিক্সন চৌধুরী। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে হেরে যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক সাংসদ কাজী জাফরউল্লাহ। এরপর থেকে এই তিন উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা কাজী জাফরউল্লাহ ও স্বতন্ত্র সাংসদ এই দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়েন।