আগামীতে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে রাষ্ট্রপতি করবে বলে খবর দিয়েছে ভারতের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক যুগশঙ্খ। শনিবার পত্রিকাটি এক প্রতিবেদনে লিখেছে, বাংলাদেশে আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রোষানলে দেশত্যাগী প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে রাষ্ট্রপতি করবে খালেদা জিয়ার দল বিএনপি। ইতোমধ্যে সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে রাষ্ট্রপতি করার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। দলটির একাধিক শীর্ষনেতা যুগশঙ্খের কাছে বাংলাদেশের প্রথম হিন্দু প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে দেশটির ‘প্রথম হিন্দু রাষ্ট্রপতি’ করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।

যুগশঙ্খের প্রতিবেদনে খেলা হয়েছে, এর আগে প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন সুরেন্দ্র কুমারকে বিএনপি তাদের প্রস্তাবিত ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের’ রাষ্ট্রপতি হিসেবে নাম প্রস্তাবের কথা বলেছিল। বিএনপির একাধিক নেতা ওই সময় বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ‘ঐক্যমতের রাষ্ট্রপতি’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

কিন্তু বর্তমানে দলটি মনে করছে, আগামী ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হলে সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে পূর্ণ মেয়াদের রাষ্ট্রপতি করবেন। কারণ হিসেবে দলটির একাধিক নেতা যুগশঙ্খকে জানিয়েছে, বিচারপতি সিনহা অত্যন্ত সৎ এবং বিজ্ঞ একজন আইনজ্ঞ। তাকে বিচারপতি করলে সমলোচনা থাকবে না। পাশাপাশি তাকে রাষ্ট্রপতি করে সংখ্যালঘু হিন্দুদের একটি বার্তা দিবে যে বিএনপি হিন্দুদের সুরক্ষায় কাজ করতে বদ্ধ পরিকর।

এ ছাড়াও সুরেন্দ্র কুমারকে রাষ্ট্রপতি করে বিএনপি দিল্লিকে বার্তা দিতে চায় যে, তারা ভারতবিরোধী নয়। বরং প্রতিবেশির সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রেখেই চলতে চায়।

পত্রিকাটি আরো লিখেছে, বিচারপতি সিনহাকে রাষ্ট্রপতি করার আলোচনা নিয়ে বাংলাদেশের একাধিক বুদ্ধিজীবীর কথায়, বাংলাদেশে বর্তমানে যে হারে ভারতবিরোধীতা বাড়ছে; সেটা কমাতে বিএনপির এই সিদ্ধান্ত কিছুটা হলেও কাজে দেবে। একই সঙ্গে দিল্লির তরফ থেকেও বিএনপির এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাবে।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করা সুরেন্দ্র কুমার বাংলাদেশের সংবিধানের সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের একটি রায় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরাগভাজন হয়েছিলেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের প্রধানের হুমকি ও নির্যাতনের কারণে বাংলাদেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন বলে সম্প্রতি নিউইয়ার্ক ভিত্তিক একটি টেলিভিশনে সাক্ষাতকারে তিনি উল্লেখ করেছেন।

এ ছাড়া সদ্য প্রকাশিত বাংলাদেশের প্রথম হিন্দু প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার আত্মজীবনী ‘এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেমোক্রেসি’ বইতেও তার দেশত্যাগ নিয়ে শেখ হাসিনাকে কাঠগড়ায় তুলেছেন।

উল্লেখ্য, বিচারপতি সিনহা ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের একটি রায় সমুন্নত রেখে তার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত সদস্যের বেঞ্চ সরকারের একটি আবেদন খারিজ করে দিলে শেখ হাসিনা সরকার তার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়। ওই রায়ে উচ্চ আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে অযোগ্যতা ও অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ন্যাস্ত করার কথা বলা হয়। জাতীয় সংসদের আনা সংশোধনীটিকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে ২০১৬ সালের ৫ মার্চ রায় দেয় হাই কোর্ট।

২০১৭ সালের ১ আগস্ট বিচারপতি সিনহার নেতৃত্বে বেঞ্চ চূড়ান্ত রায় দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এবং দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী শুধু প্রকাশ্যেই প্রধান বিচারপতি সমালোচনা শুরু করেননি, তারা ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংদদে দাঁড়িয়ে তার বিরুদ্ধে চরম নিন্দাপূর্ণ ভাষায় বক্তব্য দেন এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় বাতিল করতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায় এমন প্রস্তাব পাসের দাবি জানান। ফলে বিচারপতি সিনহা ছুটি নিতে বাধ্য হন এবং এরপর ২০১৭ সালের অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করেন। কিন্তু এই ছুটিকে টুইস্ট করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সিনহার ক্যান্সার হওয়ায় তিনি দায়িত্বপালন করতে পারছিলেন না। কিন্তু এই বক্তব্যকে পরে প্রত্যাখ্যান করেন বিচারপতি সিনহা।