সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পুনঃসংশোধন করার দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান এবং সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়,১৯সেপ্টেম্বর কণ্ঠভোটে জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮।সুজন মনে করে, এই আইনটির অনেকগুলো ধারা (৮, ২৮, ২৯, ৩১) নিবর্তনমূলক, যে ধারাগুলোর ব্যাপক অপব্যবহার হতে পারে। বিশেষ করে নাগরিকদের হয়রানি ও কণ্ঠরোধ করা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ব্যাহত করার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে।এতে আরও বলা হয়, এই আইনে পরোয়ানা বা অনুমোদন ছাড়াই পুলিশের হাতে যে কাউকে তল্লাশি, জব্দ এবং গ্রেফতার করার ক্ষমতা রয়েছে। তাই এই আইনকে অপব্যবহার করে পুলিশ সাধারণ নাগরিকদের হেনস্তা করতে পারে বলে আমরা মনে করি। তাছাড়া এই আইনের ৩২ ধারায় ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক আমলের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট-১৯২৩ অন্তর্ভুক্ত করায় দুর্নীতি-সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে বলেও আমরা মনে করি।

বিবৃতিতে বলা হয়,এর আগে তথ্য প্রযুক্তি আইন ব্যবহার করে গত ছয় বছরে শত শত লোককে জবরদস্তিমূলকভাবে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং সে আইনটি দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল। এ কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি পাস হওয়ার আগে বিভিন্ন মহল থেকে নানা পরামর্শ ও দাবি তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু সরকার সেগুলো পুরোপুরি আমলে নেয়নি। বরং বাতিল হওয়া তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কয়েকটি (২৫, ২৮, ২৯ ও৩১) ধারায় ভাগ করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ৫৭ ধারাকে ভেঙে, কিছুটা নতুন শব্দচয়ন করে, ক্ষেত্রবিশেষে কিছুটা শাস্তি কমিয়ে, প্রায় অবিকলভাবে নতুন আইনে রাখা হয়েছে।ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিবর্তনমূলক ধারাগুলো বাতিল করে আইনটি পুনঃসংশোধন করার জোর দাবি জানিয়ে সুজন বলে, যে কোনও সভ্য ও গণতান্ত্রিক সমাজে মত-বিমত থাকতেই পারে। তাছাড়া আমাদের আইন ও সংবিধান যেখানে নাগরিকের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা তথা বাক স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিয়েছে, সেখানে এই ধরনের নিবর্তনমূলক আইনপ্রণয়ন হওয়া সত্যিই দুঃখজনক। আমরা মনে করি এই আইনটি মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। এটি দেশে গণতান্ত্রিক পরিসরকে সঙ্কুচিত করবে, নাগরিকদের বাকস্বাধীনতা হরণ করবে এবং নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতাবোধ সৃষ্টি করবে। আমরা সুজনের পক্ষ থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিবর্তনমূলক ধারাগুলো বাতিল করে আইনটি পুনঃসংশোধন করার জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে উপরোক্ত বিলে স্বাক্ষর না করে আইনটি পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানাচ্ছি।