জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কের পথে শুক্রবার লন্ডন পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভিভিআইপি ফ্লাইটটি লন্ডনের স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করে।যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার নাজমুল কাওনাইন বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান।

শনিবার লন্ডনে কাটিয়ে রোববার সকালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে নিউ ইয়র্কের পথে রওনা হবেন শেখ হাসিনা।শুক্রবার সকাল ১০টা ২৩ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী।

১০ দিনের এই সফরে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। রোহিঙ্গা সঙ্কটের টেকসই সমাধানের পথে প্রতিবন্ধকতাগুলো সেখানে তিনি বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরবেন।অধিবেশনের ফাঁকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ছাড়াও একাধিক বিশ্বনেতার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার। জাতিসংঘে আসা বিশ্ব নেতাদের সম্মানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও তিনি যোগ দেবেন।জাতিসংঘে এবারের সফরে ৫০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যবসায়ীদের ২০০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও তার সফরসঙ্গী হয়েছে।অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু,সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনী প্রধান,পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং বেসামরিক-সামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।

নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭৩তম অধিবেশন শুরু হয়েছে। সেখানে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে সাধারণ বিতর্ক। এই বিশ্ব সংস্থার ১৯৩টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা তাতে অংশ নেবেন।জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের এবারের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে মেকিং দি ইউএন রিলেভেন্ট টু অল পিপল: গ্লোবাল লিডারশিপ অ্যান্ড শেয়ারড রেসপনসিবিলিটিস ফর পিসফুল, ইকুইটেবল অ্যান্ড সাসটেইনেবল সোসাইটিস’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পক্ষে তার বক্তব্য তুলে ধরবেন। গতবারের মত এবারও তার ভাষণে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ গুরুত্ব পাবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী জানিয়েছেন।বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এবারের অধিবেশনে তিনটি বিষয় প্রাধান্য পাবে। রোহিঙ্গা সঙ্কট, বিশ্ব শান্তি ও শান্তিরক্ষা কর্মসূচি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি), বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার বিষয়গুলোর প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে গুরুত্ব পাবে।মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে গত বছরের ২৫ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আসা আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বাংলাদেশ বহন করে চলেছে কয়েক দশক ধরে।আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গতবছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি করলেও এখনও প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি।

রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে গতবছর সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া বক্তৃতায় পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সঙ্কট সামাল দিতে দূরদর্শী ভূমিকার জন্য এবারের জাতিসংঘ অধিবেশন চলাকালে নিউ ইয়র্কে দুটি পুরস্কার পাচ্ছেন তিনি।পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, মানবিক কারণে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে ‘নজির স্থাপন করায়’ প্রেস সার্ভিস নিউজ এজেন্সি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ইন্টারন্যাশনাল এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ দেবে।এর আগে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান ও বুট্রোস বুট্রোস-ঘালি এবং ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মার্তি আহতিসারি এ পুরস্কার পেয়েছেন।