২৯ সেপ্টেম্বর শনিবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দল ঢাকায় সমাবেশ করবেন।ওই দিন বিকেল ৩টায় ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে এই সমাবেশ হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪-দলের সমন্বয়কারী মোহাম্মদ নাসিম। মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে মহানগর ১৪ দলের সমাবেশের প্রস্তুতি সভায় নাসিম এ কথা বলেন। ওই একই দিন, অর্থাৎ, ২৯ সেপ্টেম্বর শনিবার ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বিএনপি তাদের পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশের তারিখ ২ দিন পিছিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর করবে বলে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে। এর আগে ২৭ সেপ্টেম্বর এই সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল দলটি।

এখন থেকেই ঢাকা দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট। জোটের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, নেতা-কর্মীরা এলাকায় প্রস্তুত থাকবেন। কারও নামে বা কোনো দলের নাম উল্লেখ না করেই নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে নাসিম বলেন, ওই অপশক্তি যেন মাঠে নামতে না পারে। ওদের মাঠে প্রতিহত করবেন, রাস্তায় প্রতিহত করবেন। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আগে থেকেই ঢাকা দখলে ছিল, ভবিষ্যতেও ঢাকা আমাদের দখলে থাকবে। শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশ শেখ হাসিনার দখলে থাকবে। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, চক্রান্তকারীরা মাঠে নামবে। আমরা দেখব কারা মাঠে নামবে, আর কে নামবে না। তিনি বলেন, আগামী একটি মাস আপনাদের কোনো কাজ নেই। ১৪ দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পাড়া-মহল্লায় আপনারা সজাগ থাকবেন।কোনো চক্রান্ত নৈরাজ্য হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ইনশা আল্লাহ আমরা প্রতিহত করব।নির্বাচনী প্রচারের বিষয়ে নাসিম বলেন, নির্বাচনের প্রচারের কাজ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ইতিমধ্যে জেলা উপজেলায় নির্বাচনী প্রচারের কাজ শুরু হয়েছে। ১৪ দলের শরিক দলগুলো দেশের বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনের প্রচারের কাজ শুরু করে দিয়েছে। নির্বাচনের কাজ করে যাচ্ছে। আমরা এবার চাই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হোক। কিন্তু যখন কোনো উত্তপ্ত রাজনীতিবিদেরা, দলছুট রাজনীতিবিদেরা, যাঁদের আদর্শের কোনো ঠিকানা নেই, দলের কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই, তাঁরা গণতন্ত্রের কথা বলেন, তখন আমাদের সন্দেহ হয় আবারও সেই অসৎ চক্রান্ত শুরু হয়ে গেছে।

২৯ সেপ্টেম্বর ১৪ দলের সমাবেশ সফল করার আহ্বান জানিয়ে নাসিম বলেন, আপনারা ১৪ দলের প্রোগ্রামে আসবেন। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন। ঢাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে এ বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। ২৯ তারিখ ১৪ দলের সমাবেশ। আপনারা আপনাদের এমপিকে নিয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছে যান।জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের উদ্দেশে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আমরা এত দিন দেখেছি খেলার সময় খেলোয়াড় ভাড়া করা হয়, এখন দেখছি ড. কামাল হোসেনের মতো নেতারাও ভাড়ায় যাচ্ছেন। আমাদের সঙ্গে খেলবেন, খেলেন। কোনো সমস্যা নেই। ভাড়াটে খেলোয়াড় দিয়ে কি কখনো জয় পাওয়া যায়? যায় না।যাদের নিজেদেরই কোনো অস্তিত্ব নেই তারা অন্য দলে গিয়ে কি অস্তিত্ব পাবে? ‘

জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আপনারা (যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা) বর্ণচোরা। আপনাদের প্রতি দেশের জনগণের আস্থা নেই। আর বিশ্বাস করি আপনাদের কর্মীদেরও আপনাদের প্রতি আস্থা নেই।নির্বাচন বানচালের কোনো চেষ্টা সফল হবে না মন্তব্য করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, যখনই এ দেশে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই হয়েছে, এই চেনা মুখগুলো নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য বারবার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশের মানুষ সব সময় গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হবে।নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের নামে সেনাবাহিনীকে উত্তেজিত করা হচ্ছে দাবি করে নাসিম আরও বলেন, সেনাবাহিনীকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সকলের মনে আছে ২০০১ সালে কীভাবে একটি দলকে পরাজিত করার চক্রান্ত করা হয়েছিল। পৃথিবীর কোনো দেশে তাদের সেনাবাহিনীকে এভাবে ব্যবহার করা হয় না। আমরা দেখেছি কীভাবে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে অতীতে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বর্তমান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে কাজ করবে। নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত দেবে, সে অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে।’ তিনি বলেন, নির্বাচনের আছে মাত্র তিন মাস। অল্প কিছুদিনেই হয়তো নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে। তাদের সিদ্ধান্ত দেবে।

এদিকে, নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১ অক্টোবর থেকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে বলেছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ।মঙ্গলবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, আমরা এবার খালি মাঠে গোল দিতে দেব না। জনগণকে নিয়েই আমরা থাকব। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, ‘আসুন পহেলা অক্টোবর থেকে রেডি হয়ে যান, রেডি হয়ে যান।তবে ১ অক্টোবর তারিখটি তিনি নির্দিষ্ট করে কেন বললেন, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি তার কথায়।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ‘জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম ৭১’ এর উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে নেতাকর্মীদের মাঠে নামার আহ্বান জানিয়ে মওদুদ বলেন, স্বৈরাচারী সরকারকে অপসারণ করতে হলে সারা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। মাঠে নামতে হবে। জনগণের জোয়ার এই সরকারকে দেখাতে হবে এবং তা দেখবে সরকার।একাদশ সংসদ নির্বাচনের তোড়জোড়ের মধ্যে বদরুদ্দোজা চৌধুরী নেতৃত্বাধীন ‘যুক্তফ্রন্ট’ এবং ডা. কামালের ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ যে জোট বেঁধেছে, তাতে যোগ দিয়েছে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে থাকা বিএনপিও।নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সংলাপে বসে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে সরকারকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার’ পক্ষ থেকে।নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি এবারও তাদের অবস্থানে অনড়। এর সঙ্গে তারা এবার দুর্নীতি মামলার রায়ে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি যুক্ত করে নিয়েছে। মওদুদ বলেন, জনগণকে সাথে নিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আমরা আগামী নির্বাচন অংশ গ্রহণ করে এই সরকারকে অপসারিত করব। তা করব শান্তিপূর্ণভাবে ভোটের মাধ্যমে, কোনো ভায়োলেন্সের মাধ্যমে নয়।জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে নিউ ইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, যখন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ড. কামাল হোসেন এবং ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাহেব শুরু করলেন তখন তারা (আওয়ামী লীগ) স্বাগত জানালেন। কিন্তু এখন প্রধানমন্ত্রী বলছেন, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, সুদখোরদের নিয়ে ঐক্য তৈরি করা হয়েছে, এরা জনগণের জন্য কিছু করতে পারবে না।