জয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আসামিপক্ষ বিচারে সহায়তা করছে না এমন অভিযোগ তুলে মামলার রায়ের দিন ঠিক করতে আদালতে আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫এ এই আবেদন করে দুদক। বিচারক আখতারুজ্জামান আবেদনের ওপর আদেশ দেবেন ৩০ সেপ্টেম্বর।একই অভিযোগ তুলে জামিনে থাকা মামলার প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খানের জামিন বাতিল চেয়েছে দুদক। আদালত অবশ্য পরবর্তী তারিখ পর্যন্ত তাঁদের জামিনের মেয়াদ বাড়িয়ে দুদকের এ আবেদনের ওপর আদেশ দেওয়ার দিন ঠিক করেন। এ নিয়ে চলতি সপ্তাহে এ মামলায় তিন দিন শুনানি হলো। তিন দিনই দুদকের পক্ষ থেকে আসামিপক্ষকে যুক্তিতর্ক শুনানি করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করা হয়।খালেদা জিয়াসহ অপর তিনজনের আইনজীবীরা আদালতের কাছে যুক্তি তুলে ধরেন, খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় তিনি আদালতের হেফাজতে আছেন। খালেদা জিয়া অসুস্থ। তাঁকে আদালতে হাজির না করা হলে মামলার শুনানির সুযোগ নেই। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার চলার আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যেতে তাঁরা সময় চান।

দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আজ আদালতে মৌখিক ও লিখিতভাবে অভিযোগ করেন, আইনে কোথাও যুক্তিতর্ক শুনানি করার বিধান নেই। এরপরও আসামিপক্ষকে যুক্তিতর্ক শুনানি করার সুযোগ দিচ্ছেন আদালত। কিন্তু আসামিপক্ষ জামিনসহ সব ধরনের সুযোগ পকেটে ভরে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যুক্তিতর্কের শুনানি করছে না।আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বিরুদ্ধে একগুঁয়ে আচরণের অভিযোগ তুলে মোশাররফ হোসেন আদালতকে বলেন, আসামিপক্ষ মোটেও আদালতকে সহযোগিতা করছে না। বাইরের বন্ধুদের পরামর্শ শুনে আদালতের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করছেন না।দুদকের আইনজীবীর এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে আদালতে খালেদার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, তিনি (কাজল) মামলার চেয়ে রাজনীতির কথা বেশি বলছেন। এ বিচার যদি একতরফা হয়, যদি প্রহসনের বিচারের তকমা লেগে যায়, তা কখনো কাম্য নয়। আমরা আদালতকে সব সময় সহযোগিতা করে আসছি।যুক্তিতর্ক শুনানি করার জন্য সময় চেয়ে মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ। তিনি সুস্থ হলে অবশ্যই আদালতে আসবেন, বিচারে সহায়তা করবেন। একই কথা বলেন খালেদার অপর আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া। তিনি আদালতকে বলেন, খালেদার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুর রেজাক খানসহ অন্যরা। রেজাক খান অসুস্থ। যে কারণে যুক্তিতর্ক শুনানি করার জন্য সময় চান তিনি।এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ আদালতের কাছে অভিযোগ আনেন, খালেদা জিয়াসহ অন্যদের আইনজীবীরা বরাবরের মতো একই কথা বলছেন। আমরা সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না। যুক্তিতর্ক শুনানি না করে তাঁরা আদালতকে অসহযোগিতা করছেন। আদালত নিজেও গতকাল মঙ্গলবার আসামিপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা কি আদালতে আসেন কেবল জামিন নেওয়ার জন্য? আপনারা বিচারকে বিলম্বিত করছেন।

এর আগে ন্যায়বিচার পাওয়ার আশঙ্কার কথা তুলে ধরে গত সোমবার এ আদালতের প্রতি অনাস্থা দেন বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। সেদিন জিয়াউলের জামিন বাতিল করে তাঁকে কারাগারে পাঠান আদালত। এই অনাস্থা আবেদনের ওপর আজ আদেশ দেওয়ার কথা ছিল। আদালত আগামী রোববার এ ব্যাপারে এ আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।এর আগে ২০ সেপ্টেম্বর এ মামলায় খালেদা জিয়া আদালতে না আসায় তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে বলে আদেশ দেন আদালত। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতকে জানিয়েছেন, এই আদেশে তাঁরা সংক্ষুব্ধ। এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন।নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে বর্তমানে বন্দী আছেন খালেদা জিয়া।জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার তিনটি ধার্য তারিখে আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন না করায় বিচারের এ অংশটি বাদ দিয়েই রায়ের তারিখ নির্ধারণের জন্য আদালতে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

এ কারাগারেই আরেকটি ভবনে গত ফেব্র“য়ারি থেকে কারাবন্দি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।অসুস্থতার কারণে তাকে গত সাত মাসে একবারও আদালতে হাজির করতে না পারায় জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ করতে সরকারের নির্দেশে সেপ্টেম্বরের শুরুতে আদালত স্থানান্তর করা হয় কারাগারের ভেতরে।কিন্তু তারপরও খালেদাকে আদালতে আনতে না পেরে গত ২০ সেপ্টেম্বর তার অনুপস্থিতিতেই বিচার চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেন বিচারক মো. আখতারুজ্জামান।

আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দেওয়া সময়ের তৃতীয় দিন বুধবার বেলা ১১টা থেকে ৪০ মিনিটের মত আদালতের কার্যক্রম চলে।আসামি মনিরুল ইসলাম খানের স্থায়ী জামিন বহাল রাখার আবেদন করেন তার আইনজীবী আক্তারুজ্জামান।অন্যদিকে খালেদার জামিন বাড়ানো ও মনিরুলের জামিন বহালের আবেদন নাকচ করার আবেদন করেন দুদকের আইনজীবী কাজল।

পরে বিচারক খালেদার জামিন বাড়ানোর আবেদন মঞ্জুর করেন এবং মনিরুলের জামিন ৩০ তারিখ পর্যন্ত বহাল রাখেন।এর আগে সোমবার আরেক আসামী জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুলের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ও আক্তারুজ্জামান বিচারকের আখতারুজ্জামানের প্রতি অনাস্থার আবেদন নিয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার জন্য ২০ দিনের সময় দেওয়ার আবেদন করেছিলেন।বুধবার এ বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য থাকলেও তা দ্বিতীয়বারের মতো পিছিয়ে পুনরায় ৩০ সেপ্টেম্বর দিন নির্ধারণ করে দেন বিচারক।

জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।মামলার এক আসামি খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী পলাতক রয়েছেন। তাকে বাদ রেখেই পুরাতন কারাগারের ভেতরে অস্থায়ী আদালত বসানোর আগে এই মামলার কার্যক্রম চলছিল পুরান ঢাকার বখশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে।এ মামলায় দুদকের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলেও খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির যুক্তিতর্ক শুনানি বাকি রয়েছে।

বুধবার অনাস্থার আবেদন দেওয়া জিয়াউল ইসলাম মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আদালতে উপস্থিত থাকলেও বক্তব্য দেননি। অন্যদের মধ্যে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি আব্দুল্লাহ আবু আদালতে উপস্থিত ছিলেন।