বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেছেন, যা ঘটেছে তা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা। তদন্ত কমিটিতে নাম লিখে দিয়েছি নাম প্রকাশ করবো না। তদন্ত কমিটির মাধ্যমে যার অপরাধ প্রমাণ হবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী আসার পরে অপরাধীর বিরুদ্ধে তিনি যা ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার তাই করবেন। আমি ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। যেহেতু এটা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া কমিটি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তিনি নিবেন।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, বুধবার দিবাগত রাত ১টার সময় নিজের বড় ভাইয়ের সাথে কথা-কাটাকাটির জেরে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রুহুল আমিনকে বেধড়ক পিটুনি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস।

এ প্রসঙ্গে আলিয়ার সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন বলেন, সঞ্জিতের অনুসারীরা হাসপাতালে গিয়ে আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্রদেরও মারধর করে শধু তাই নয় পথে পথচারী অনেককেই মারধর করে। এরমধ্যে মারধরের শিকার হয়ে ঢাকা কলেজের ২০১৩-১৪ সেশনের ম্যানেজমেন্ট এর ছাত্র মমিনুর রহমান রকি ও ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার ডিগ্রি ২য় বর্ষের ছাত্র কাজী শাওন,হাসান মাহমুদ, রফিকুল ইসলাম, বেলালসহ আরো অনেকেই গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে আসেন। আমার কর্মীদের উপর হামলা করার জন্য সঞ্জিতের বিরুদ্ধে মামলা করবো। তিনি আরো বলেন, বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালের নতুন ভবনে এই ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত রুহল আমিনকে ঢামেক-এ ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজের নতুন ভবনের লিফটে ওঠার সময় সঞ্জিত চন্দ্র দাসের ভাইয়ের সাথে ধাক্কা লাগা এবং পরবর্তীতে কথা কাটাকাটির জের ধরে রুহুল আমিনকে মারধর করেন সঞ্জিত চন্দ্র দাস এবং তার অনুসারীরা। এই ঘটনার পর রাত দুইটার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ঢাকা মেডিকেল কলেজে আসেন। গোলাম রাব্বানীকে রুহুল আমিন বলেন, ‘সঞ্জিত নিজেই আমাকে মারতে মারতে ৮ তলা থেকে নিচে নিয়ে আসে। মারার পাশাপাশি আমাকে শিবির বলে অপবাদ দিতে থাকে।’

যতক্ষণ পর্যন্ত এর বিচার না হবে ততক্ষণ আমি খাবো না, কেউ যদি আমাকে জোর করে তবে আমি আত্মহত্যা করবো। এই কমিটির দ্বারা আমি যে অপমানের শিকার হয়েছি তা হাজার বার জন্ম নিলেও ভুলবো না।

ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রুহুল আমিনের বড়ভাই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুর রহিমের শাশুড়ি মারা গেলে মরদেহ নিতে রুহুল আমিন, আব্দুর রহিম এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রানা ও রুহুল আমিনের ভাবী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। লিফটে ওঠার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাসের বড় ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে সঞ্জিতের কয়েকজন অনুসারীও লিফটে ওঠেন। রুহুল সঞ্জিতের অনুসারীদের কয়েকজনকে লিফট থেকে নেমে তাদেরও লিফটে উঠতে সুযোগ দেয়ার অনুরোধ জানান। এ সময় সঞ্জিতের ভাইয়ের সাথে রুহুলের কথা কাটাকাটি হয়।

এর প্রায় ৪০ মিনিট পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিতের অনুসারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের শতাধিক নেতাকর্মী ঢাকা মেডিকেল কলেজের নতুন ভবনের ৮ তলায় উঠে রুহুলকে বেধড়ক মারধর শুরু করে। এ সময় সঞ্জিত সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মারতে মারতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা রুহুলকে ৮ তলা থেকে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে আসেন। রুহুল আমিন সোহাগ-নাজমুল কমিটির সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে ছিলেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আমার পরিচয় দিয়েছি। বলেছি লাশ নিতে এসেছি। তবুও ওরা আমাকে যেভাবে শিবির বলে মারধর করেছে। এত বছর ছাত্রলীগ করে যদি এই লজ্জা পেতে হয় তাহলে কার জন্য ছাত্রলীগ করলাম, কিসের জন্য ছাত্রলীগ করলাম।’ ‘ওরা আমাকে আমার ভাইয়ের শাশুড়ির লাশ নিতে দেয়নি। অনেকক্ষণ লাশ আটকে রেখেছিলো।’