ভোলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নে নদীতে ভাসমানভাসমান খাঁচায় মাছ চাষে শিক্ষিত যুবকের অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন মো: জাহিদুল ইসলাম জাহিদ (৪০)। অর্থনীতিতে অনার্স পাশ সম্পন্ন করার পরও চাকুরির জন্য বসে না থেকে নিজ উদ্যেগে মাছের চাষ শুরু করেন। বর্তমানে মাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় তার। কোন মাসে এর চেয়ে বেশি লাভ থাকে। প্রথম দিকে পুকুর ও ঘেরে মাছ চাষ করলেও তিন বছর হলো নদীতে নেটের (জাল) সাহজ্যে তৈরি করা খাঁচায় বিভিন্ন ধরনের মাছ পালন করছেন। উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ১০টি খাঁচা ও ৭ হাজার মাছের পোনা সরকারিভাবে প্রদান করা হয়েছে জাহিদকে।

আর এতেই সফলতা ধরা দেয় জাহিদের জীবনে। কঠোর পরিশ্রম ও মৎস্য অধিদপ্তরের পরামর্শে আত্বকর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছেন শিক্ষিত এই যুবক। তাকে দেখে এখন অনেকেই খাঁচায় মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।এলাকার বেকারত্ব ঘোঁচাতে যুবকরা গড়ে তুলছেন নদী পাড়ে নেট দিয়ে ছোট ছোট মাছের প্রকল্প। খুব অল্প সময়ে প্রাকৃতিক উপায়ে বিক্রির উপযোগী হয় এসব মাছ। এর স্বাদ সম্পুর্ন ভিন্ন হওয়ায় বাজারে চাহিদাও প্রচুর।

সরেজমিনে ভোদুরিয়ার ৩নং ওয়ার্ডের শেরে বাংলা বাজার সংলগ্ন তেতুলিয়া নদীর পাড়ে মিরাজের মাছের খামারে গিয়ে দেখা যায়, ১৫টি খাচাঁয় তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, মিরর কার্প (লাল মাছ) মাছ চাষ করছেন। খাঁচার চারপাশে লোহার পাইপ, বাশ ও ড্রাম দিয়ে শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ১০ ফুট বাই ২০ ফুটের খাঁচগুলো গভীর রয়েছে ৮ ফুট। প্রতিটি খাঁচায় ২ হাজার করে মোট ৩০ হাজার মাছ রয়েছে। সার্বক্ষনিক থাকা ও মাছের খাবার, নেট ইত্যাদী রাখার জন্য নদী পাড়ে একটি ঘর তৈরি করেছেন। জাহিদকে দেখা যায় নৌকায় করে মাছের খাবার দিচ্ছেন। জাহিদ বলেন, সম্পুর্ন প্রাকৃতিক উপায়ে বেড়ে উঠা এসব মাছের রোগ-বালাই হয়না। তাই কোন মেডিসিন প্রয়োগ নেই। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিক্রি করা যায়। পুকুর বা ঘেরে একটি তেলাপিয়া মাছ এক কেজি হতে সময় নেয় ৬ থেকে ৭ মাস, আর নদীতে খাঁচায় তেলাপিয়া কেজি হয় ৩ থেকে ৪ মাসে। প্রতি ৩ মাস পর পর মাছ বিক্রি করা হয়।

জাহিদ জানান জীবনের প্রথম দিকের গল্প। ২০০৭ সালে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স পাশ সম্পন্ন করার পর চাকুরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু চাকুরির জন্য বসে না থেকে পুকুর লীজ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। পরবর্তিতে পত্রিকায় খাঁচায় মাছ চাষের খবর দেখে আগ্রহী হন। মৎস্য অধিদপ্তরের সাথে আলাপ করলে তারা উৎসাহ দেন। তাদের সার্বিক তত্বাবধায়ন ও পরামর্শে শুরু করেন মাছ চাষ।
এছাড়া সরকারিভাবে ১০টি খাঁচা ও ৭ হাজার মাছ পাওয়াতে প্রথম দিকে তার খরচও অনেক কম হয়েছে বলেও জানান। বর্তমানে আরো ৫টি খাঁচা নিজ উদ্যেগে নদীতে স্থাপন করেছেন তিনি। জাহিদের নদীতে খাঁচায় মাছ চাষের সাফল্য দেখে অনেইে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেছেন। স্থানীয় জহিরুল ইসলাম সজিব (৩৫), এনামুল হক শাহজাদা (৩৬), আজাদ রহমান (৪৫)ও রফিকুল ইসলাম (৫৫) জাহিদকে দেখে অনুপ্রানিত হয়ে খাঁচায় মাছ চাষ করছেন। রোগ-বালাই না হওয়াতে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত। তারাও বর্তমানে মাছ বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি এলাকার অনেক বেকার যুবকরা খাঁচায় মাছ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।।
স্থানীয় খাঁচায় মাছ চাষি ফরিদুল ইসলাম জানান, এই এলাকায় নদীতে খাঁচায় মাছ চাষের ধারনা তারা জাহিদের কাছ থেকেই পান। পুকুর নদীতে মাছ চাষে বিভিন্ন রোগ-বালাইর সম্মুখিন হতে হলেও এই পদ্ধতিতে কোন অসুখ নাই। পানি বদলানোর কোন ঝামেলা নেই। পুকুরের মাছের চাইতে এর দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই নেট দিয়ে মাছ চাষ করতে চাচ্ছে। জাহিদের সাফল্য উৎসাহিত করছে গ্রামের অনেক শিক্ষিত যুবককে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: মাকসুদ আলম বলেন, একজন অনার্স পাশ ছেলে হয়েও জাহিদ যেভাবে পরিশ্রম করে নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ করছেন, তা সকলের জন্য অনুকরনীয়। সে সারারাত জেগে মাছের প্রকল্প পাহারা দেয়। কাজের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান করেছে বলে আজ সফলতা ধরা দিয়েছে তাকে। মিরাজ হয়েছেন একজন সফল মৎস্য চাষি।

এব্যপারে সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো: আসাদুজ্জামান বলেন, জাহিদ একজন শিক্ষিত ও উদ্যমী মানুষ। তাকে প্রথম বলার পর সে নদীতে খাঁচায় মাছ চাষে রাজি হয়। সরকারিভাবে তাকে ১০টি খাঁচা ও মাছ সহায়তা দেয়া হয়েছে। তাকে একটি মাছ চাষের গ্রুপের প্রধান করে এই কার্যক্রম শুরু হয়। তিনি বলেন, তাকে দেখে এখন অনেক খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেছে। জাহিদ খাঁচায় মাছ চাষের সাথে তার পারিবারিক উন্নতি ও নিজ আত্বকর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি করেছেন। মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জাহিদসহ সকল চাষিরে সব ধরনের পরামর্শ সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান আসাদুজ্জামান।