ব্যস্ত সড়ক, ব্যস্ত শহর। তার থেকেও বেশী ব্যস্ত যান্ত্রিক সভ্যতার রোবটরূপী মানুষগুলো। যেন কেউ কারো দিকে তাকানোর ফুরসত নেই। সকলের গন্তব্য একটাই, নিজের কর্মস্থল এবং কাজ শেষে একরাশ ক্লান্তি নিয়ে বাসায় ফেরা। এয়ারপোর্ট রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি। সিডিওল মিস হওয়ায় ট্রেন আসতে একটু দেরি হচ্ছে। অন্য লাইনের ট্রেনগুলো সিডিওল অনুযায়ী একের পর এক স্টেশন ছাড়ছে। দুপুরবেলা, তাই স্টেশনে তেমনটা কোলাহল নাই। একটা ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার পর প্লাটফর্ম অনেকটা নিস্তব্ধ হয়ে যায়। এই নিস্তব্ধতার মাঝেই হঠাৎ শুনি মানুষের গোঙানির শব্দ। কিছু না বুঝার আগেই দেখি চৌদ্দ-পনের বছরের একটি বাচ্চা রেল লাইনে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। কাছে যেতেই বুঝতে পারলাম তার দুটি পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন। ইতোমধ্যে অনেক লোক জড়ো হয়েছে ঘটনাস্থলে। যে যার মতো মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে ছবি নিচ্ছে। অনেকে আবার ভিডিও ধারণ করছে। হয়তো ফেসবুক কিংবা ইউটিউবে ছাড়বে। ক্যাপশনে লিখবে, ‘দেখুন ট্রেনে কাটা মানুষের আত্মচিৎকার’। যে যার মতো ছবি নিতে ব্যস্ত। কিন্তু কেউ বাচ্চাটিকে হাসপাতালে নিতে উৎসাহী না। এরই মধ্যে একজন বৃদ্ধ লোক এসে চিৎকার করে বলতে লাগলেন, আপনারা কি মানুষ নাকি অন্য কিছু। মানবতা বলতে কি কিছুই নেই আপনাদের? একটি বাচ্চা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে আর আপনারা দাঁড়িয়ে শুধু তামাশাই দেখতেছেন। মনে হঠাৎ প্রশ্ন জাগলো, আসলেইতো আমরা কি আসলে মানুষ? মানুষের ভিতরতো মানবতা থাকার কথা। ভাবতে লাগলাম রবি ঠাকুরের সেই কথাটি, ‘অাধুনিক সভ্যতা দিয়েছে বেগ, নিয়েছে আবেগ’। হুম এটাই সত্যি, আমাদের আবেগের জায়গাগুলো আজ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। আর সে জায়গায় স্থান নিয়েছে ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া। যার বদৌলতে মানবতা হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের ভেতর থেকে। আর আমরা হয়ে যাচ্ছি মনের দিক থেকে মুমূর্ষু। বলা চলে, মানবতা আজ ক্যামেরা বন্দি।

শফিউল আল শামীম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ।

সম্পাদকীয় সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক সংঘ।