সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল নিয়ে সম্পাদক পরিষদ যেসব উদ্বেগ ও দাবি জানিয়েছে, সেগুলো নিয়ে সরকার আরও আলোচনা করে তা নিরসনের উদ্যোগ নেবে।তবে নতুন করে আলোচনার জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন নেওয়া হবে।রোববার সচিবালয়ে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে সরকারের তিন মন্ত্রী ও একজন উপদেষ্টার বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। আজকের আলোচনায় সরকারের পক্ষে আইনমন্ত্রী ছাড়াও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।সম্পাদক পরিষদের পক্ষে ছিলেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনামসহ ১৪ জন সম্পাদক।

সম্পাদক পরিষদও আশা প্রকাশ করে বলেছে, তারাও মনে করে আলোচনার মাধ্যমে একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে।সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলের আপত্তির মুখে ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস হয়। এখন রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে এটি আইনে পরিণত হবে।সম্পাদক পরিষদ এই আইনের অন্তত নয়টি ধারা নিয়ে আপত্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এই আইন বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলে দেবে। আইনটির প্রতিবাদে ১৯ সেপ্টেম্বর মানববন্ধনের কর্মসূচি দিয়েছিল। এরপর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছিলেন। তাঁর ওই অনুরোধে সাড়া দিয়ে সম্পাদক পরিষদ মানববন্ধন কর্মসূচি স্থগিত করে আজকের আলোচনায় অংশ নেয়। বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সম্পাদক পরিষদ আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা নিয়ে আপত্তির জানিয়েছেন। যেহেতু আইনটি সংসদের পাস হয়ে গেছে, তাই এখন সম্পাদক পরিষদের আপত্তি ও বক্তব্যগুলোকে মন্ত্রিসভায় তুলে ধরা হবে। আগামী ৩ অক্টোবরের মন্ত্রিসভার বৈঠকে হয়তো তুলে ধরা হবে না। কারণ অনেকগুলো অ্যাজেন্ডা আছে। পরের সভায় তুলে ধরা হবে। তারপর মন্ত্রিসভা যে কার্যপরিধি ঠিক করে দেবে, সেই অনুযায়ী আলোচনায় বসার জন্য তাঁরা সম্মত হয়েছেন।এ সময় তথ্যমন্ত্রী বলেন, আলোচনার মাধ্যমেই নিষ্পত্তি করতে পারবেন বলে তাঁরা মনে করেন।

বৈঠক শেষে মাহফুজ আনাম বলেন, তাঁরা আলোচনার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, তাঁরা মনে করেন, যে আইনটি সংসদে পাস হয়েছে সেটা সংবিধানে বাক ও গণমাধ্যমের যে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, তার লঙ্ঘন করবে। এটি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও গণতন্ত্রেরও পরিপন্থী। ওনারা আশ্বাস দিয়েছেন, আলোচনা করে সমঝোতায় আসতে পারবেন।মুদ্রিত সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের একটি সংগঠন সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে রোববার প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্ত জানান আইনমন্ত্রী।

আইনমন্ত্রী বলেন,আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে এ রকম একটা আইন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে, আমরা সেই ঐকমত্যে পৌঁছেছি। কিন্তু এ রকম একটা আইন যেন সাংবাদিকতার স্বাধীনতা বা বাকস্বাধীনতা ক্ষুণ্ন না করে- সেই ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন আছে।ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে আনিসুল বলেন, অন্যান্য ধারা নিয়ে কারও বক্তব্য নেই।৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকা হয়েছে, সেখানে অনেক এজেন্ডা আছে, হয়ত সেখানে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হবে না। এর পরে যে কেবিনেট মিটিং হবে সেখানে এটাকে আমি উপস্থাপন করব। এডিটরস কাউন্সিলের যে আপত্তিগুলো তা তুলে ধরব। আলোচনা করার জন্য যে টার্মস অব রেফারেন্স দেওয়া হবে সে অনুসারে আমরা আবার আলোচনায় বসার জন্য সম্মত হয়েছি।আনিসুল বলেন, খবরের কাগজে সম্পাদক পরিষদের আপত্তিগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য তথ্যমন্ত্রী এবং আইসিটি মন্ত্রীসহ আমরা মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করব। ২১ ধারাটা মোটামুটি আমরা এগ্রি করেছি, যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে। কিছু যদি আরও ভালো করা যায় চিন্তা করা হবে।

সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের নেতৃত্বে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, প্রথম আলোর মতিউর রহমান, নিউ এইজের নুরুল কবীর, মানবজমিনের মতিউর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নঈম নিজাম, যুগান্তরের সাইফুল আলম, কালের কণ্ঠের ইমদাদুল হক মিলন, ইনকিলাবের এ এম এম বাহাউদ্দীন, ঢাকা ট্রিবিউনের জাফর সোবহান, ইনডিপেনডেন্টের শামসুর রহমান, বণিক বার্তার দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, সমকালের মুস্তাফিজ শফিসহ আরও কয়েকজন এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য সচিব আবুয়াল হোসেনও সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন।ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে এর বিভিন্ন ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন। তাদের আপত্তির সুরাহা না করেই গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে ওই আইন পাস করা হয়।ওই আইন নিয়ে বোববার বিএফইউজে ও ডিইউজে এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নেতাদের সঙ্গেও বৈঠকে বসার কথা রয়েছে তথ্যমন্ত্রীর।