একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়েছে বিএনপি। রোববার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসভায় এ দাবি জানানো হয়।বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী দিনের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া আমাদের বলেছেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ দানব সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। কারণ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া মুক্তির কোনো উপায় নেই।জনসভায় দলের পক্ষে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। ওই দাবিগুলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি। দাবি আদায়ে আগামী ৩ অক্টোবর সারা দেশের জেলায় জেলায় সমাবেশ করা হবে ও জেলা প্রশাসকদের স্মারকলিপি দেওয়া হবে। ৪ অক্টোবর দেশের মহানগরগুলোতে সমাবেশ ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা আমাদের কর্মসূচি শুরু করতে চাই। কারণ এ সরকার আমাদের দেশ, জাতি, সমাজ ও গণতন্ত্রকে শেষ করে দিয়েছে। তাই এ সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করব। আগামী দিনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে আন্দোলনের কর্মসূচি সফল করতে হবে।সরকার ও পুলিশের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, একবার চিন্তা করেছেন যেভাবে মামলা দিচ্ছেন তদন্ত হলে তখন কি জবাব দিবেন? সব কিছুর জবাব দিতে হবে। এ সরকারের নিস্তার নেই, তাদের সব অপশাসনের জবাব দিতে হবে। আসলে সরকার ভয় পেয়েছে। আর সে জন্য মামলা দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। আওয়ামী লীগ রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান বলে বলে ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। তাই ভয়ের কারণে বলে সবকিছুতে বিএনপির ষড়যন্ত্র করে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, কারাগারে বন্দি খালেদা জিয়া আমাদের সামনে নেই। কিন্তু তাঁর খালি চেয়ার আমাদের সামনে আছে। খালেদা জিয়া আমাদের চোখের সামনে না থাকলেও তিনি আমাদের হৃদয়ের মাঝে আছেন।বিএনপির ৭ দফায় যা আছে-১. দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার২. জাতীয় সংসদ বাতিল করা৩. সরকারের পদত্যাগ ও সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা। ৪. সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সশস্ত্রবাহিনী নিয়োগ নিশ্চিত করা,৫. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার বিধান নিশ্চিত করা,৬. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন-প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে তাদের ওপর কোনো প্রকার বিধি-নিষেধ আরোপ না করা,৭. ক. দেশের সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার,খ. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনী ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা এবং নতুন কোনো ধরনের মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা। গ. পুরোনো মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার না করার নিশ্চয়তা,

ঘ. কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্রছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা।বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসা, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ভোটের সময় সেনা মোতায়েনসহ বিভিন্ন দাবিতে আজকের জনসভা হয়। দুপুর ২টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে জনসভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। চলে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। জনসভায় প্রধান অতিথি করা হয় কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে।গতকাল শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশ বিএনপিকে আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার জন্য ২২ শর্তে অনুমতি দেয়। এরপরই চলে সভা সফল করতে বিএনপির প্রস্তুতি।এর আগে আজকের এই জনসভার তারিখ বেশ কয়েকবার পরিবর্তন করে বিএনপি। প্রথমে ২৭, পরে ২৯, এরপর আজ ৩০ সেপ্টেম্বর জনসভা করে দলটি।জনসভার ঘোষণা দেওয়ার পর দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকার আশপাশের নেতাদের সঙ্গে যৌথ সভা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।মূলত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকায় বড় সভা করে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করা ও নিজেদের অবস্থান জানান দিতে বিএনপির আজকের এই জনসভা। সেই জন্য ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলো থেকে দলের নেতাকর্মীদের সভায় অংশ নিতে নির্দেশ দেয় হাইকমান্ড।আজকের এই জনসভা দুপুর ২টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৯টা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা সভাস্থলে এসে উপস্থিত হন। বিশেষ করে ঢাকার আশপাশের নেতাকর্মীরা সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনসভাস্থলে আসতে থাকেন ঢাকার বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাঁরা মৎস্য ভবন, রমনা পার্ক ও শাহবাগ থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলে প্রবেশ করেন। এ সময় গোটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকা বিএনপি নেতাকর্মীদের স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে। বিএনপি নেতাকর্মীদের মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলে আসার ফলে মৎস্য ভবন, শাহবাগ, কদম ফোয়ারা এলাকা হয়ে ওঠে মিছিলের নগরী। এসব মিছিলের মিলনস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, যেখানে আজ দীর্ঘদিন পর জনসভা করে বিএনপি।

এসব ছোট ছোট মিছিল নিয়ে আসা নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে নানা স্লোগান দেন। তাদের কণ্ঠে ছিল, ‘জেলের তালা ভাঙব, খালেদা জিয়াকে আনব’, ‘আমার নেত্রী আমার মা, বন্দি থাকতে দিব না’; ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ এবং ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি, আন্দোলনের শক্তি’।এদিকে জনসভা ঘিরে সব ধরনের নাশকতা ও হট্টগোল ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে ছিল পোশাকধারী পুলিশ ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ। এ ছাড়া ছিল বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয় পুলিশের সাঁজোয়া যান।