বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আগাম ছক তৈরি করছে সরকার। ভয় পায় বলেই বিএনপি মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ ৫৫ জন শীর্ষ নেতার নামে হাস্যকর অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (০২ অক্টোবর) বেলা সোয়া ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন অভিযোগ করেন। একতরফা নির্বাচন করতেই সরকারের সাজানো ছকে পুলিশ দলের মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।সরকারবিরোধী উসকানি ও পুলিশের কাজে বাধা’ দেওয়ার অভিযোগে সোমবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৫৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে করা মামলার প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

হাতিরঝিল থানার ওই মামলায় রিজভী নিজেও আসামি। অন্য আসামিদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমানের নাম রয়েছে।এই মামলায় সাতজনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।সংবাদ সম্মেলনে রিজভী তিনি বলেন, দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের কাছে আষাঢ়ে গল্পের একটা ফরমেট সবসময়ই প্রস্তুত থাকে। মামলা দেওয়া ও গ্রেপ্তারে সেগুলো ব্যবহার করে থাকে। এবারো পুলিশ তাই করেছে। সেই একই ফরমেটের ধারাবাহিকতায় মহাসচিবসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।

সরকার একতরফা নির্বাচন করতে ছক ধরে এগোচ্ছে। সারাদেশ নিঃশব্দ ও জনশূণ্য করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের এই ঘটনা সেটিরই প্রথম পদক্ষেপ বলে আমরা মনে করি।রিজভী আরো বলেন, গত রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির বিশাল জনসভার পর থেকে সরকার আরো বেশি ক্ষিপ্ত ও প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছে। ওই জনসভা শেষে পাইকারি হারে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের পরও তাদের পরিতৃপ্তি হয়নি। এখন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের তালিকা ধরে তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় পুলিশের কাজে বাঁধা ও নাশকতার হাস্যকর, মিথ্যা, বানোয়াট, ষড়যন্ত্রমূলক মামলা পুলিশ দিয়েছে।প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আপনারা কেউ দেখেছেন কী কোথাও কেউ সেদিন জনসভা শেষে পুলিশের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে? অথচ আমরা গণমাধ্যমে এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা যারা দেখেছেন ঈগলের মতো, চিলের মতো পুলিশ ছোঁ দিয়ে কর্মীদের টানছে এবং ভ্যানের মধ্যে তুলছে। কোথাও কোনো ইট-পাটকেল ছোড়া বা একটা ফুলের পাঁপড়ি নিক্ষেপ করেছেন এটার কেউ কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবে না।ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু অংশ সম্পাদক পরিষদ আপত্তি করায় তাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেইসবুকে সমালোচনা করা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রিজভী।ওই আইন নিয়ে সমালোচনার জবাবে জয় তার ফেইসবুক পেইজে লেখেন, সম্পাদক পরিষদের নৈতিকতা’ বলে কিছু নেই।

রিজভী বলেন, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সিনিয়র সাংবাদিকরাই সম্পাদক পদে উন্নীত হন। তারা সমাজের সঙ্গতি-অসঙ্গতি, শুভ-অশুভসহ নানা বিষয় গণমাধ্যমে প্রতিফলনের প্রধান দায়িত্ব পালন করেন। সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতির নানা বিভাজন ও জটিলতা বিচার বিশ্লেষণ করে মানুষকে পথ দেখাতে অভিমত ব্যক্ত করেন। অথচ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার মতে এই সমস্ত গুণী ব্যক্তিদের নৈতিকতা নেই। তাহলে নৈতিকতা আছে কাদের- আমি এই কথাটি জানতে চাই প্রধানমন্ত্রীর প্রযুক্তি ও তথ্য উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছ থেকে। ভোটারবিহীন সরকারের নৈতিকতা আছে? পদ্মাসেতু, শেয়ারবাজার, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক, কেন্দ্রীয় ব্যাংক লোপাটকারীদের নৈতিকতা আছে? যারা কয়লা, পাথর গিলে খেয়েছেন তাদের নৈতিকতা আছে? দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারের নামে প্রহসনকারীদের নৈতিকতা আছে? ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার জোরে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়েরকারীদের নৈতিকতা আছে? ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, জনগণকে শত্রুপক্ষ মনে করে বলেই তাদের টুঁটি টিপে ধরতে এই কালো আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।‘অবৈধ সরকারের কর্মকাণ্ডে বাকশাল স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তারা কোনোভাবেই বিরোধী দলের অস্তিত্ব মানতে পারছে না’, বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকার লুটপাট ও দুর্নীতির কোনো মামলা হয় না। আওয়ামী লীগ লুটেরাদের দল। তাদের কর্মকাণ্ডে ফ্যাসিবাদ চরিত্র ফুটে উঠছে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকার, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-দফতর সম্পাদক তাইজুল ইসলাম টিপু প্রমখ।