পুলিশ গত এক মাসে চার হাজারের বেশি গায়েবী মামলায় বিএনপির সাড়ে তিন লাখ নেতা-কর্মীকে আসামি করেছে বলে দাবি করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।ি তনি পুলিশকে বর্ণনা করেছেন গায়েবী মামলার কারখানা হিসেবে। আর সমীক্ষার বরাত দিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোটের হারের পূর্বাভাস দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামকে বলেছেন গায়েবী পরিসংখ্যান ব্যুরোর অধিকর্তা।বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন রিজভী।বিএনপির ভোট ৩০ আর আওয়ামী লীগের ভোট ৪২ শতাংশ হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের গতকাল করা এ মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, এ পরিসংখ্যান অলৌকিক ও উদ্ভট।ঢাকার একটি হোটেলে গতকাল মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। সেখানে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে এসে বিএনপির ভোট ৩০ শতাংশ আর আওয়ামী লীগের ভোট ৪২ শতাংশ হয়েছে। দেশের ও জনগণের উন্নয়ন করার কারণে আওয়ামী লীগের ভোট বেড়েছে। এ বিষয়ে সমীক্ষা আছে বলেও দাবি করেন তিনি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের উন্নয়ন শীর্ষক ওই আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফোরাম নামের একটি সংগঠন।

আজকের সংবাদ সম্মেলনে এইচ টি ইমামের ওই মন্তব্য নিয়ে রিজভী বলেন, এসব উদ্ভট পরিসংখ্যান এইচ টি ইমামের নিজস্ব, নাকি তথ্য ও যোগাযোগ উপদেষ্টার, তা জাতির জানার আগ্রহ আছে। এহেন অলৌকিক পরিসংখ্যান এইচ টি ইমাম সাহেবের মাথা থেকে আসাটা যৌক্তিক। কারণ, খন্দকার মোশতাকের সহযোগী হিসেবে কাজ করার জন্য বিব্রতকর অবস্থা কাটাতে এখন প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করতে মোসাহেবদের ম্যারাথন দৌড়ে তিনি এগিয়ে থাকতে চান।গতকালের অনুষ্ঠানে নির্বাচন সামনে রেখে দলের প্রচারের বিষয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, নির্বাচনী প্রচারে আক্রমণাত্মক হতে হবে। শুধু বিরোধী দলের প্রচারের পাল্টা দিলে হবে না। পাল্টা প্রচার করতে হবে আক্রমণাত্মকভাবে।

নির্বাচনী প্রচার নিয়ে ইমামের এ মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণায় দলীয় নেতা-কর্মীদের আক্রমণাত্মক হতে হবে বলেছেন, যা শুধু নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থী নয়, বরং আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী নেতা-কর্মীদের সন্ত্রাসী হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে উসকানি দেওয়ার শামিল। আগামী জাতীয় নির্বাচনটি যে ভোটার ছাড়াই হবে, এইচ টি ইমামের বক্তব্য সেটিরই পূর্বাভাস।বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধের দাবি জানান রিজভী। তিনি বলেন, খয়ের খাঁ পুলিশ এখন আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড় আশীর্বাদ। শেখ হাসিনার ইচ্ছায় বিরোধী দল দমন করতে দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে গঠিত পুলিশের জুড়ি মেলা ভার। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র চায় না, আওয়ামী লীগ চায় আনুগত্য তন্ত্র। সে জন্য আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর একনিষ্ঠ অনুগত পুলিশ দেশজুড়ে গ্রেপ্তার আর মামলার জাল বিছিয়ে বিরোধী কণ্ঠস্বর নীরব রাখতে চাচ্ছে।সংবাদ সম্মেলনে রিজভী নিজেই পুলিশের গত এক মাসের মামলার পরিসংখ্যান হাজির করেন।তিনি দাবি করেন, গত এক মাসে ৪ হাজার ১০৮টি মামলায় ৩ লাখ ৫৮ হাজার ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪ হাজার ৪৮৩ জনকে।এর মধ্যে এজহারভুক্ত জ্ঞাত আসামির সংখ্যা ৮৪ হাজার ৭৮৩ এবং অজ্ঞাত হচ্ছে ২ লাখ ৭৩ হাজার ২৪২ জন।
রিজভীর দেওয়ার এই তথ্যের সত্যতা পুলিশের কাছ থেকে যাচাই করতে পারেনি। এই বিএনপি নেতাও তার তথ্যের উৎস স্পষ্ট করেননি।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সরকারের মত পুলিশরাও এখন গায়েবী তথ্য উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। এই ‘খয়ের খাঁ’ পুলিশ এখন আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড় আর্শীবাদ।গত সপ্তাহে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসভার পর রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় দায়ের করা যে মামলায় রিজভীসহ ৫৫ জনকে আসামি করা হয়েছে, সেটাও তার ভাষায় গায়েবী মামলা।তিনি বলেন, “আওয়ামী অীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, পুলিশের কাছে নাকি তথ্য আছে বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে নাশকতার ছক আঁকছে। সেজন্যই নাকি জ্যেষ্ঠ নেতাদের নামে মামলা করা হয়েছে।ওবায়দুল কাদের সাহেবকে বলতে চাই, আপনাদের পুলিশ এমনই যে, ওই মামলায় বর্ণিত ভাঙচুর হওয়া গাড়ির নম্বর তারা জানে না। মামলায় বলা হয়েছে, আমরা উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছিলাম বলে আসামি করা হয়েছে। অথচ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিদেশে আছেন, সেদিন জনসভায় ছিলেন না। আর আমি ছিলাম বরাবরের মতই পার্টি অফিসে । তাহলে বুঝুন আওয়ামী লীগের পুলিশ কত পারঙ্গম ও দক্ষ!রিজভী বলেন, হাতিরঝিলের মামলায় পুলিশ বলেছে, মগবাজারে ঘটনা ঘটেছে। অথচ সাংবাদিকরা সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন ওই এলাকায় সেদিন গাড়ি ভাংচুর বা ককটেল বিস্ফোরণের কথা কেউ জানে না।রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তার জরিপ নিয়ে বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামেরও সমালোচনা করেন রিজভী।সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, শওকত মাহমুদ, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, মুনির হোসেন, শামসুজ্জামান সুরুজ উপস্থিত ছিলেন।