দুর্নীতি মামলার সাজায় কারাগারে থাকা বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়াকে দ্রুত ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং তার চিকিৎসায় গঠিত পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিশেষ বোর্ড গঠনের নির্দেশনা চেয়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে করা একটি রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, এ কে এম এহসানানুর রহমান প্রমুখ।অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।খালেদার চিকিৎসায় গত সেপ্টেম্বরে সরকার যে মেডিকেল গঠন করে দিয়েছিল, তার তিন সদস্যকে বাদ দিয়ে নতুন তিনজনকে সেখানে দায়িত্ব দিতে বলেছে আদালত।হাই কোর্টের আদেশ অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল জলিল চৌধুরী এবং ফিজিকাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ বোর্ডে থাকবেন।আর কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক হারিসুল হক, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী এবং চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারেক রেজা আলীর বদলে নতুন তিনজনকে বোর্ডের সদস্য হিসেবে মনোনীত করে দেবে সরকার।

তবে এই তিনজনের কেউ কেন্দ্রীয় বা জেলা পর্যায়ে সরকারসমর্থক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচীপ) বা বিএনপি সমর্থক ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) বর্তমান বা প্রাক্তন সদস্য কিংবা সমর্থক হতে পারবেন না।হাই কোর্ট বলেছে, খালেদা জিয়া তার পছন্দমত ফিজিওথেরাপিস্ট, গাইনোলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান নিতে পারবেন। বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনতে পারবেন।খালেদা জিয়াকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি এবং ভর্তি করা মাত্র তার চিকিৎসা শুরুর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পরে খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, আদালত খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য নতুন করে পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর তিন জন চিকিৎসক থাকবে খালেদা জিয়ার পছন্দ অনুযায়ী এবং বাকি দুজন থাকবেন নিরপেক্ষ চিকিৎসক।এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এই আইনজীবী বলেন, এর আগে সরকার যে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছিল তার সব সদস্য ছিল স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সদস্য। এটি আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন। তাই তাদের ব্যাপারে খালেদা জিয়া আপত্তি জানিয়েছেন। এটা আদালতকে আমরা বলেছি। অ্যাটর্নি জেনারেলও এ বিষয়ে কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। এরপর আদালত দল নিরপেক্ষ দুই চিকিৎসকসহ খালেদা জিয়ার নিজের পছন্দের আরও তিন চিকিৎসককে নিয়ে মোট পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গছনের আদেশ দিয়েছেন। দল নিরপেক্ষদের তালিকায় বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর চিকিৎসকরাও থাকতে পারবেন না। তবে সিনিয়র-জুনিয়র ইস্যু থাকায় আদালত চিকিৎসকদের নাম উল্লেখ করতে চাননি।

এছাড়াও খালেদা জিয়াকে দ্রুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কথাও বলেছেন আদালত জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার ইচ্ছা অনুযায়ী বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালের কথা বলেছিলাম। কিন্তু আদালত সবদিক বিবেচনা করে ‘গুড চয়েস ইজ পিজি (বর্তমান নাম বিএসএমএমইউ) হসপিটাল’ বলে মন্তব্য করেছেন। তাকে সেখানে দ্রুত ভর্তির আদেশ দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশেষায়িত হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট করা হয়। তবে রিটটির শুনানি বারেবারে পিছিয়ে যায়।