আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে সেবিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়েনের রাষ্ট্রদূতদের অবহিত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার ‘ইইউ-বাংলাদেশ ফোর্থ বিজনেস ক্লাইমেট ডায়ালগ’ এ বিষয়ে তাদের অবহিত করা হয় বলে মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান। সংলাপ শেষে তোফায়েল বলেন, তাদের বলেছি এটা নির্বাচনের বছর। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই, সকল দলে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সংবিধান অনুসারে নির্বাচন হবে।

ক্ষমতাসীন দল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে, সরকারের আকার ছোট হবে যদিও এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার এবং নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। সেই ম্যাসেজটিও আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে দিয়েছি।ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত রেনজি তিরিংকের নেতৃত্বে নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত এবং যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত সংলাপে অংশ নেন।এছাড়া ইইউভুক্ত দেশগুলোর বিভিন্ন কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মিশনের বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই সংলাপে অংশ নেন।

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যাতে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা ভিন্ন রূপে বহাল থাকে ইইউভুক্ত দেশের রাষ্ট্রদূতদের কাছে সেই আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে জানিয়ে তোফায়েল বলেন, বড় যে বিষয়টি আমরা আলোচনা করেছি তা হল- আমরা যখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হব তখন যেন আমাদের জিএসসি সুবিধাটা ভিন্ন ফর্মে বলবৎ থাকে জিএসপি প্লাসের মত, যেটা তারা শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকে দিয়েছে সেভাবে আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাব।আমি আমার বক্তব্যে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছি। বাংলাদেশ এখনও স্বল্পোন্নত দেশ হলেও ২০২৪ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হব, ২০২৭ সাল পর্যন্ত আমরা স্বল্পোন্নত দেশের সুবিধা পাব।মন্ত্রী জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশ ২১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে। আর ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ইইউ থেকে আমদানি হয়। তোফায়েল বলেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক করব সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। ইউরোপীয় ইউনিয়ভুক্ত দেশগুলোকে এখানে বিনিয়োগ উৎসাহিত করব, তাদের সব রকমের সুযোগ-সুবিধা দেব। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে তাদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।

ইইউভুক্ত দেশগুলোতে অস্ত্র ছাড়া সব পণ্য রপ্তানিতে জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশ ২১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, যা মোট রপ্তানির প্রায় ৫২ শতাংশ।অন্যদিকে ইইউভুক্ত দেশগুলোর যেসব কোম্পানি বাংলাদেশ ব্যবসা করছে তারা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সেসব সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণে গত মে মাসে ইইউ-বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ডায়ালগ করার সিদ্ধান্ত হয়।২০১৬ সালের ২২ মে প্রথম ইইউ-বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ডায়লাগ হয়। ওই ডায়ালগে সুনির্দিষ্ট বিষয় ও সেক্টরভিত্তিক পাঁচটি ওয়াকিং গ্রুপ গঠন করা হয়।

এগুলো হল- কাস্টমস, ফার্মাসিউটিক্যাল, ট্যাক্স, ফাইন্যান্সিয়াল ফ্লোস এবং বিনিয়োগ বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্র“প। সংশ্লিষ্ট সেক্টরের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উপায় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবের আলোকে ইতোমধ্যে তিনটি সংলাপ হয়েছে।এই পাঁচটি ওয়ার্কিং গ্র“প বাণিজ্য ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কাজ করছে জানিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, সেসব বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি।ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, প্রতি ছয় মাস পর পর ধারাবাহিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের সংলাপ হবে।সংলাপে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম, বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রধান এবং ইইউভুক্ত দেশগুলো রাষ্ট্রদূত ছাড়াও ইইউ বাণিজ্যখাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।