দেশের জনগণকে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।গণভবন থেকে বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিন দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে কারো মুখাপেক্ষী হয়ে চলবে না, নিজের পায়ে দাঁড়াবে। ভিক্ষা করে চলবে না।শ্রম দিয়ে, মেধা দিয়ে এ দেশকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানান প্রধানমন্ত্রী।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণসহ দেশের প্রত্যেক জেলা ও উপজেলা এবং বিদেশে বাংলাদেশে দূতাবাসে ৪ থেকে ৬ অক্টোবর এই উন্নয়ন মেলা চলবে।দেশে চুতর্থবারের মত আয়োজিত এ মেলায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং সংস্থার স্টলে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে। সবার জন্য এ মেলা উন্মুক্ত।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের দেশের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করব; এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। এই রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষ, গ্রামে পড়ে থাকা তৃণমূলের মানুষ; তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা, তাদের জীবন মান উন্নত করা, তাদেরকে একটু সুন্দর জীবন উপহার দেওয়া- এটাই আমাদের লক্ষ্য।এবারের উন্নয়ন মেলায় মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে উপহার হিসাবে থাকছে ‘অনলাইন ডিজিটাল পাঠ সহায়িকা। অনলাইন ডিজিটাল পাঠ সহয়িকার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল আমরা পর্যালোচনা করলাম। পাসের হার বৃদ্ধি পেলেও সেখানে কয়েকটি বিষয়ে আমরা দেখেছি আমাদের ছেলেমেয়েরা একটু পিছিয়ে আছে। সেজন্যই আমরা উন্নয়ন মেলায় বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি.. এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য আমার তরফ থেকে একটা উপহার হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের জন্য বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে অনলাইন ডিজিটাল পাঠ সহয়িকা।

তিনি বলেন, আধুনিক যুগে কেউ পিছিয়ে থাকুক বা ডিজিটাল যুগে কেউ পিছিয়ে থাকুক; সেটা আমরা চাই না।বিভিন্ন ভাষা শেখার অ্যাপলিকেশনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন,শুধু ইংরেজি না, ১০টি ভাষায় আমরা একটা অ্যাপ তৈরি করে দিয়েছি। যা অনলাইনে পাওয়া যাবে। এখান থেকে বিভিন্ন ভাষা শেখা যাবে।বিদেশে চাকরি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাষা শেখার ওপর গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য-প্রযুক্তি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারে উন্নয়নের চিত্র তিনি তার বক্তৃতায় তুলে ধরেন।তিনি বলেন, আগামীতে যে শিশু জন্ম নেবে; তারা যেন একটু সুন্দর পরিবেশে জন্ম নিতে পারে, তাদের বাবা-মা যাতে শিক্ষা-দীক্ষা সব দিক থেকে উন্নত করতে পারে, আমরা সে ধরনের একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়ে যেতে চাই।আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে যেনো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হয়। আমাদের দেশে যেনো প্রযুক্তির বিকাশ ঘটে। আমাদের দেশের মানুষও যেনো প্রযুক্তির শিক্ষা নিয়ে দেশকে গড়ে তুলতে পারে। প্রত্যেকটা মানুষ যেন মানুষের মত করে বাঁচতে পারে; সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।উন্নয়ন মেলার আয়োজন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন,এই উন্নয়ন মেলার মধ্যে দিয়ে সারা বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে এবং আরও কী উন্নয়ন হতে পারে, আমাদের তরুণ প্রজন্মকে সেই ধারণাটা আমরা জানতে চাই। আগামী দিনের বাংলাদেশকে তারা কীভাবে গড়তে চায় সেই চিন্তা ভাবনা যেন তাদের মধ্যে থাকে।

প্রধানমন্ত্রী বরগুনার আমতলী,বাগেরহাটের ফকিরহাট, নড়াইলের লোহাগড়া এবং রংপুরের পীরগঞ্জে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের উপকারভোগীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন। এর আগে অনুষ্ঠানে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ওপর ভিডিওচিত্র দেখানো হয়।এবারের উন্নয়ন মেলায় তথ্য প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে সাফল্য, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন কার্যক্রমসহ গত ১০ বছরে শেখ হাসিনার সরকারের অর্জন ও সাফল্যের তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে। মেলা উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন এবং আজকের বাংলাদেশ’,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগ ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ এবং শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ শীর্ষক তিনটি বিশেষ সেমিনারও হচ্ছে।এছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নানা দিক তুলে ধরা হচ্ছে উন্নয়ন মেলায়।স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হোসেন তৌফিক ইমাম ও মসিউর রহমান গণভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসডিজি বিষয়ক বিশেষ সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। সঞ্চালনা করেন মূখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।