বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান মোদের দিয়েছেন লাল-সবুজের পতাকা। দিয়েছেন নিজস্ব পরিচিতি, নিজস্ব ভুখন্ড, স্বাধীন বাংলাদেশ। দেশকে বিশে^র কাছে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছেন তারই যোগ্য উত্তরসুরি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সাগরপারের কলাপাড়ার জনপদকে শুধু দেশে নয় পরিচিত করেছেন বিশে^র কাছে। দেশ স্বাধীনের পরে প্রথম দেশের তৃতীয় পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ। যা আজ দৃশ্যমান। চলছে নৌপথে পণ্য খালাশ কার্যক্রম।

দেশের উন্নয়নের কথা যেখানেই বলুকনা কেন প্রধানমন্ত্রীর অবদানে কলাপাড়াকে বাদ দেয়ার সুযোগ নেই। আরও কত কী। হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প কলাপাড়ার মানুষের কাছে এখন আর স্বপ্ন নয়। দৃশ্যমান। ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। অন্তত আট হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করার মতো একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ চলমান। শুধুমাত্র ৬৫০ মিটার দীর্ঘ একটি টার্মিনাল নির্মাণ কাজের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে পায়রা মুল বন্দর চারিপাড়ায়। রাবনাবাদ চ্যানেলে যেখানে একাধিক মাদার ভ্যাসেল ভিড়বে পণ্য খালাশের জন্য। এখানেই ৩৯৮০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। কলাপাড়ায় এখন বিদেশী শ্রমিক কর্মরত রয়েছে সহ¯্রাধিক। আর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শ্রমিকের সংখ্যা অন্তত ছয় হাজার। শের-ই-বাংলা নৌঘাটির নির্মান কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই চালু করা হয়েছে দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন। পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার উন্নয়নে পৌরসভায় উন্নীত। কুয়াকাটাগামী পর্যটকের যোগাযোগে মাত্র ২২কিমি সড়কের তিন নদীতে তিন সেতু নির্মাণ। শহীদ শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল সেতু। কুয়াকাটাগামী বিকল্প সড়কে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় ৭০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। নির্মিত হয়েছে কলাপাড়া পৌরশহরে ৪০০ আসন বিশিষ্ট শহীদ শেখ কামাল অডিটরিয়াম। অন্তত এক শ’ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ সড়ক পাকাকরন। যেখানে মানুষ জুতা সেন্ডেল পড়ে হাঁটতে পারতনা, সেখানে পিচঢালা সড়ক। গ্রামীণ যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। শুধু তাই নয়, সারা বিশে^ সমাদৃত দারিদ্র্য-ক্ষুদামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে নেয়া সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি। একর্মসূচির আওতায় শুধুমাত্র কলাপাড়া উপজেলায় শতকরা ৮০ ভাগ দরিদ্র মানুষের কাছে খাদ্যসহ বিভিন্ন সহায়তার সুবিধা। এখন গ্রামের মানুষ পেটভরে মোটা ভাত খায়। শতকরা ৭০ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। বিদ্যুতের আলোয় পড়ছে তাঁর সন্তানেরা। দেখছেন এক নতুন বাংলাদেশ। শ্রমজীবী, দিনমজুর, হাইলা-কামলা শ্রেণির মানুষেরা হয়েছেন গেরস্ত পরিবার। গুনছেন কড়কড়ে নোট। স্বস্তির হাসিতে নিজেকে রাখছেন হাসিমুখ।

সরকারি দেয়া তথ্যমতে, কলাপাড়ায় অতি দরিদ্র মহিলাদের খাদ্য সহায়তার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিশেষ ভিজিডির আওতায় ফি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন ৩৬৮৯ পরিবার। মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রাপ্ত প্রসূতির সংখ্য ১৫৯৬ জন। ল্যকটেটিং মাদার ভাতাভোগীর সংখ্য ৬৫০ জন। দুই ঈদের সময় বিশেষ ভিজিএফএর সুবিধাভোগী পরিবারের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৫১৬ পরিবার। ১০ টাকা কেজিতে ৩০ কেজি করে ফেয়ার প্রাইস কার্ডের চাল পাচ্ছেন ২০ হাজার ১৫৩ পরিবার। এমনিভবে বয়স্কভাতাভোগী পরিবারের সংখ্যা ৫হাজার ৭৫০ জন। এসব বয়ষ্ক অসহায় মানুষ মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছে। একইভাবে ফি মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন ২৭৯৫ বিধবা। ১২৭০ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি পাচ্ছেন ফি মাসে ৭০০ টাকা করে ভাতা। মৎস্য ভিজিএফর চাল পাচ্ছেন ৬০৯৫ পরিবার। ৬ জন হিজড়া, দলিত হরিজন ও বেদেভাতা পাচ্ছেন ১৩৮ পরিবার। প্রতিবন্ধী শিক্ষাউপবৃত্তি পাচ্ছে ১৫২ জন। হিজড়া পরিবারের তিন শিক্ষার্থী পাচ্ছে উপবৃত্তি। একইভাবে দলিত, হরিজন, বেদে পরিবারের ৪২ শিক্ষার্থী পাচ্ছে উপবৃত্তি। এছাড়ও একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের ১৯৯টি সমিতির মাধ্যমে উপকার ভোগীর সংখ্যা ১০২৯০ জন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে আয়বর্ধক ক্ষুদ্র খামারির সংখ্যা ১২৩৪৪ জন। এ প্রকল্পের মাধ্য মাত্র পাঁচ ভাগ সার্ভিস চার্জের মাধ্যমে পাওয়া লোনের মাধ্যমে বেকারী, বাঁশ ও বেত সামগ্রী, বাই সাইকেল ও রিক্সা গ্যারেজ, খাবার দোকান, গবাদিপশু পালন, কুটির শিল্প, শস্য আবাদ, সূচি কর্ম, মৎস্যচাষ, সমন্বিত কৃষি উৎপাদন, মোবাইল মেরামত, নার্সারি, হাঁস-মুরগী পালন, ছাগল পালন, সেলুন, ক্ষুদ্রশিল্প, দর্জি কাজ, চায়ের দোকান, শুটকি তৈরির কাজ, কামার শালার কাজ, শবজির বাগান, ভ্যান গাড়ি, কাঠের কাজ, কৃষি-দোকানসহ বিভিন্ন কাজ ও কাগজের ঠোঙা তৈরির কাজে আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। এছাড়া দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌম রক্ষায় জঙ্গী দমনে রয়েছে আকাশ ছোঁয়া সফলতা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমনসব বিস্ময়কর উন্নয়নের পথে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন । ২০০৯ সালের পরে টানা দশটি বছরের এই অভাবনীয় সাফল্য মানুষের কাছে তুলে ধরতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজারো মানুষের অংশগ্রহনে কলাপাড়ার জনপদে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় এক বর্ণার্ঢ র‌্যালি শহর প্রদক্ষিণ করে। শেষ হয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে পৌছে। যেখানে তিনদিনের উন্নয়ন মেলাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজক কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভীর রহমান নেতৃত্ব দেন উন্নয়ন মেলার। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক যোগে সারাদেশের সঙ্গে উদ্বোধন করেন। র‌্যালিতে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্কুল-কলেজ মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেয়। র‌্যালি ও মেলায় এই জনপদের উন্নয়নতথ্য সংবলিত লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন প্রদর্শন করা হয়। এসব মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। এক কথায় বদলে দেয়া বাংলাদেশের এক খন্ডচিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে তিন দিনের উন্নয়ন মেলার মধ্য দিয়ে। এনিয়ে এই জনপদে এক ধরনের বর্ণাঢ্য উচ্ছ্বাস বইছে মানুষের মনে।