বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য কারাগার থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুসারে আজ শনিবার বেলা ৩টা ১৮ মিনিটে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গাড়িবহরে উঠানো হয়। গাড়িবহর হাসপাতালে এসে পৌঁছায় বিকেল পৌনে ৪টার দিকে। সেখানে উপস্থিত আছেন বিএনপির মহাসচিব মিজা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম, আবু নাসের রহমত উল্লাহ, চেয়ারপারসনের গণমাধ্যম শাখার সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ।

এ সময় শাহবাগ এলাকায় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। সেখানে আগে থেকেই হুইল চেয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাসপাতালের দুজন কর্মচারী। গোটা এলাকাই ছিল নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি বিশেষ গাড়িতে করে হাসপাতালে পৌঁছানোর পর পরই র‍্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীর নিরাপত্তাকর্মীরা কয়েকটি ছাতা নিয়ে খালেদা জিয়ার গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ান। একজন গাড়ির দরজা টেনে খুলে দিলে খালেদা জিয়া ধীরে ধীরে বাইরে বেরিয়ে আসেন। এ সময় সেখানে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমাও ছিলেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের পরনে ছিল গোলাপি শাড়ি আর চোখে ছিল পরিচিত সেই রোদচশমা। গাড়ি থেকে নামার পরই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে কেবিন ব্লকের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, হাসপাতালের ৬১১ এবং ৬১২ নম্বর কেবিনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দেওয়া হবে। আদালতের নির্দেশ অনুসারে পাঁচ সদস্যের নতুন একটি মেডিকেল বোর্ড তাঁর সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থা তত্ত্বাবধান করবেন। এই বোর্ডে তিনজন চিকিৎসক থাকবেন বিএনপির চেয়ারপারসনের নিজের পছন্দের।

হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া তাঁর পছন্দমতো ফিজিওথেরাপিস্ট, গাইনোকোলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান নিতে পারবেন। মেডিকেল বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও আনতে পারবেন। হাইকোর্টের এ নির্দেশনা অনুযায়ী খালেদা জিয়া চিকিৎসা গ্রহণে সম্মত হন বলে জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া। বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান জানান, এর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। আদালতের নির্দেশে সেই বোর্ডের চিকিৎসক ডা. এম এ জলিল (মেডিসিন) ও সহকারী অধ্যাপক ডা. বদরুন্নেসা এখন থাকছেন। এ ছাড়া নতুন করে অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক (নিউমটোলিজ), অধ্যাপক সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি (কার্ডিওলজি), অধ্যাপক নকুল কুমার দত্তকে (অর্থোপেডিক্স) বোর্ডে যুক্ত করা হয়েছে বলে জেনেছি।’ এর বেশি কিছু জানেন না বলে জানান মিডিয়া উইংয়ের এই কর্মকর্তা।

এর আগে দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া বলেছিলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে খালেদা জিয়ার পুরো চিকিৎসার বিষয়টি দেখভাল করছেন হাসপাতালের পরিচালক আবদুল্লাহ্ আল হারুন। আমি জানি, আজ উনাকে আনা হবে।’ এ দিকে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে আনাকে কেন্দ্র করে কারাগার থেকে শুরু করে বকশিবাজার, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, রূপসী বাংলা মোড়, সাবেক পিজি হাসপাতাল পর্যন্ত মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।