বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ৪ হাজার ১৪৯টি গায়েবি মামলা হয়েছে।শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে হওয়া গায়েবি মামলার হিসাব তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ৪ হাজার ১৪৯টি গায়েবি মামলা হয়েছে।মির্জা ফখরুল বলেন, গায়েবি মামলায় এজাহারে নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে ৮৬ হাজার ৬৯২ জনকে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৭৭ জনকে। সব মিলিয়ে আসামির সংখ্যা ৫ লাখ ৬২ হাজার ৯৬৭। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪ হাজার ৬৮৪ জনকে। রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে ২৭৪ জনকে।ফখরুল বলেন, সরকারপ্রধান ও আওয়ামী লীগের নেতারা দেশে বিদেশে বলছেন, নির্বাচনের পরিবেশ সুন্দর রয়েছে এবং সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, কিন্তু নির্বাচন থেকে বিএনপিকে দূরে রাখার জন্য যত ধরনের কূট কৌশল আছে, তা প্রয়োগ করছে সরকার।

বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকার সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি যেন নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে। দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নামে যেসব মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, তা দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছে সরকার। যেন তাঁদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যায়। বিএনপির দলীয় প্রধানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।ফখরুল বলেন, এটা থেকে একটা জিনিসই প্রমাণিত হয়, সরকার সম্ভাব্য সব রকমের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যেন বিএনপি নির্বাচনে যেতে না পারে।আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তির শর্ত দিয়েছে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি।তাদের শর্ত প্রত্যাখ্যান করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, কাউকে ভোটে আনতে তারা কোনো পদক্ষেপ নেবে না।ফখরুল বলেন, দেশনেত্রীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটক করে রাখা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় নির্বাসিত করে রাখা এবং আমাদের সিনিয়র নেতাদের মামলাগুলো দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে তাদেরকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার একটা প্রক্রিয়া তারা (সরকার) বের করতে পারে।

এরকম পরিস্থিতি নির্বাচনের জন্য অনুকূল নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্বাচনে যেন বিরোধী দল অংশগ্রহণ করতে না পারে, তার জন্য সবরকম অবস্থা তারা তৈরি করে রাখছে।আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা যে ৭ দফা দিয়েছি তা মেনে নিয়ে একটা পরিবেশ তৈরি করতে হবে।২০০৯ সাল থেকে বিএনপির ১ হাজার ৫১২ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন ফখরুল।

মিরসরাইয়ে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, আবার আগের নাটক শুরু হয়ে গেছে। মিরসরাইয়ে জঙ্গি আস্তানা। এই আলামত কিসের? কোন দিকে কোন উদ্দেশ্যে জাতিকে নিয়ে যেতে চায়, এটা আমাদের কাছে বড় আশঙ্কা ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচনকে থেকে বিএনপিকে দূরে রাখার জন্য এইভাবে গায়েবি মামলা দিচ্ছে। উদ্দেশ্যে আবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একটা একতরফা নির্বাচন করা।স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, এভাবে কোনো ভিত্তি ছাড়া মামলা দায়ের করে সরকার দেশে ন্যায়বিচার ও সুবিচার বলতে যা বোঝায়, তা একেবারেই নিঃশেষ করে দিয়েছে।সরকারের উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনের আগে ওয়ার্ড লেভেল পর্যন্ত যারা আমাদের নির্বাচন করবে, তাদের সকলকে কারাগারে বন্দি করে রাখা। তারা চাচ্ছেন ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার।সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, কায়সার কামাল উপস্থিত ছিলেন।