ইলিশের নির্বিঘœ প্রজনন নিশ্চিত করতে শনিবার রাত ১২টা থেকে ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে সরকার। ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ মাছ সংরক্ষণের জন্য মাছ ধরা ও বিক্রিতে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমা ইলিশের প্রজনন মৌসুম। এ সময়ে ডিম ছাড়ার জন্য ৭০-৮০ ভাগ মা ইলিশ গভীর সাগর ছেড়ে নদীর মিঠা পানিতে চলে আসে। এ বছরের ২৪ অক্টোবর আশ্বিনের পূর্ণিমা। পূর্ণিমার আগে সাগর ছেড়ে নদীতে প্রবেশকালে এবং পূর্ণিমার পরে নদী ছেড়ে সাগরে ফেরার সময় জেলেদের জালে ধরা পড়ে মা ইলিশ।তাই মা ইলিশের আসা-যাওয়া নির্বিঘœ করতে পূর্ণিমার আগে ১৭ দিন ও পরে ৪ দিনসহ মোট ২২ দিন ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ ২২ দিন ইলিশ আহরণ, বেচাকেনা, পরিবহন ও মজুদ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। এ আদেশ বাস্তবায়ন করবে মৎস্য অধিদফতর, কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

নিষেধাজ্ঞা আরোপিত প্রজনন পয়েন্টগুলো যথাক্রমে উত্তর-পূর্বে চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার শাহেরখালী থেকে হাইতকান্দী, দক্ষিণ-পূর্বে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর কুতুবদিয়া-গন্ডামারা পয়েন্ট, উত্তর-পশ্চিমে ভোলার তজুমউদ্দিন উপজেলার উত্তর তজুমউদ্দিন-সৈয়দ আশুলিয়া পয়েন্ট এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী। এ জলসীমার জেলাগুলো হচ্ছে- বরিশাল,পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, চাঁদপুর, বাগেরহাট, শরিয়তপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, খুলনা, কুস্টিয়া লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও রাজশাহী।

এদিকে বরিশাল বিভাগে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মৎস্য অধিদফতর বরিশাল বিভাগ। অতীতে যেসব এলাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ নিধনের অভিযোগ রয়েছে সেসব এলাকায় এবার থাকবে বাড়তি নজরদারি।এ সময় তালিকাভুক্ত প্রত্যেক জেলে পাবেন ২০ কেজি করে সরকারি চাল। প্রান্তিক পর্যায়ে জেলে ও আড়তদার এবং জনপ্রতিধিদের নিয়ে দফায় দফায় জনসচেতনামূলক সভা করা হয়েছে। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় গঠন করা হয়েছে টাস্কফোর্স। অন্য বিভাগের মৎস্য দফতর থেকে ৩১ মৎস্য কর্মকর্তাকে ২২ দিনের ডেপুটেশনে বরিশালে পাঠানো হয়েছে।

২২ দিনের কার্যক্রম তদারকি করতে দুটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরমধ্যে অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসিউদ্দিনকে প্রধান করে মন্ত্রণালয়ের এবং বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক ড. ওয়াহিদুজ্জামানকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে অধিদপ্তরের মনিটরিং কমিটি।বরিশাল বিভাগে চাল পাবেন ১ লাখ ৪০ হাজার জেলে : এ সময়কালে জেলেদের সহায়তার জন্য বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৮৩২টি জেলে পরিবারকে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ২০ কেজি করে চাল দেবে সরকার। এ জন্য ২ হাজার ৭৯৭ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বরিশালের ৪৩ হাজার ৬৪৪, পটুয়াখালীর ৪৫ হাজার ৬৪২, বরগুনার ৩৪ হাজার ২১১, পিরোজপুরের ১৪ হাজার ৮৭৫ ও ঝালকাঠির ১ হাজার ৪৬০ জেলে পরিবার এ সুবিধা পাবে।