১৯৯৫ সাল ক্যার্লিফোনিয়ার সান ডিয়েগোতে ফুড এ্যান্ড ড্রাগস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফ ডি এ) নিমন্ত্রণে, বায়ো ফার্মাসিউটিক্যাল কনফারেন্সে সুইডেন থেকে আমি এবং আমার সহকর্মী হেলেনা পিটারসন যোগ দিতে রওনা দিলাম আমেরিকার উদ্দেশে, যা ছিল আমার জন্য প্রথম বারের মত জার্নি টু নর্থ অ্যামেরিকা। ডাইরেক্ট ১০ ঘন্টার ফ্লাইট, লন্ডন হিথ্রো টু সান ডিয়েগো। ল্যান্ডিং এর সময় হঠাৎ প্লেন উড়াল দিলো উপরের দিকে এবং প্রায় ১৫ মিনিট ঘোরাঘুরির পর ল্যান্ডিং পর্ব শেষে জানাল যে কমনিকেশন গ্যাপের কারণে একটি মুখোমুখি কলিশনের থেকে রেহাই পেতেই এমনটি ঘটেছিল! সবাই খুবই ভয়ের মধ্যে ছিলাম মুহূর্তটিতে। এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি করে হাইয়াত রেজেন্সি হোটেলে ঢুকেই চেকিং এর পর্ব শেষ করে ৪০ তালার ওপরে এক রুমে ঢুকে গেলাম। পরে ডিনার শেষে ঘুম এবং সকালে উঠে গাড়ি একটা নিয়ে আমি আর হেলেনা রওনা দিলাম লস এঞ্জেলেসের উদ্দেশ্যে।

আমাদের কনফারেন্স শুরু হবে সোমবার থেকে। তাই শনি ও রবিবার ঘোরাঘুরি করা ছিল আমাদের প্লানে। বেশ ব্যস্ত একটি সপ্তাহ শেষ করেছিলাম একসঙ্গে, অনেক বিনোদনের মধ্য দিয়ে।সোমবারে কনফারেন্স সকাল ৯ টায়। আমি এবং হেলেনা ব্রেকফাস্ট শেষ করে তৈরি, হঠাৎ টেলিফোন বেজে উঠল, ধরতেই খবর পেলাম হোটেলের ছাদের ওপর হেলিকপ্টার ওয়েট করছে আমাদের জন্য। কারণ ট্রাফিক ব্লক করছে ফিল্ম ইনডাস্ট্রির লোকেরা, সুটিং চলছে মুভি স্টার টম ক্রুসের মিশন ইম্পসিবলের ওপর। রাস্তা ব্লক হওয়া সত্বেও ঠিক সময়ে কনফারেন্সে পৌছে গেলাম। যাই হোক অনেক নতুনত্বের সঙ্গে পরিচিত এবং শেয়ার ভ্যালু ছিল সেই কনফারেন্সের মূল লক্ষ, একই সাথে টিম বিল্ডিং, সব মিলে আমাদের দিনগুল ভালোই চলছিল।একদিন বিকেলে সবাই প্লান করলো মেক্সিকোতে গিয়ে ডিনার করতে হবে। সান ডিয়েগো থেকে মেক্সিকোর দূরত্ব আধা ঘণ্টার ভ্রমণ, আমার ব্যাগের ভেতর পাসপোর্ট আছে কি না চেক করে দেখলাম ফলে হোটেলে না গিয়েই সরাসরি রওনা দিলাম। মেক্সিকোর বর্ডারে সুইডিস পাসপোর্ট থাকায় ভিসার দরকার হলো না। সবাই মিলে ডিনার শেষে ফিরতে ইউএস ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট কন্ট্রোলে আমাকে আমার গ্রীণ কার্ড দেখতে চাইলে আমি বললাম সে কাগজটা তো হোটেলের রুমে রয়েছে। ওরা বললো যে আমি এন্ট্রি করেছি একবার এবং যেহেতু ইউএসের বাইরে মেক্সিকোতে ঢুকেছি বিধায় আমার নতুন করে ভিসা ছাড়া ঢোকা যাবে না। অর্থাৎ আমাকে নতুন করে মাইগ্রেশন করতে হবে। ঝামেলায় পড়ে গেলাম আমিসহ ২০ জন আমেরিকান নন আমেরিকান। কি করা? সবাই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা থেকে শুরু করে পুলিশকে মটিভেট করতে শুরু করতে লেগে গেল, কিন্ত আইন চলে তার নিজের গতিতে তাই কোনো কথায় কাজ হলো না। সল্যুশন খুঁজতে হবে, হঠাৎ আমার মাথায় বুদ্ধি এলো। বললাম, ওকে নেভার মাইল্ড, আমি এখন নতুন করে ঢুকতে চাই, আমাকে নতুন ভিসা দাও। সবাই অবাক এবং হতভম্ব! রি এন্ট্রি হয়ে গেল। গ্রীন কার্ডে সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা থাকায় পাসপোর্ট থাকা সত্ত্বেও ঢুকতে দিচ্ছিল না সেই কাগজটি না থাকার কারণে। কিন্তু যখনই নতুন ভিসার জন্য ইমিগ্রেশনে এপ্লাই করলাম তৎক্ষণাৎ ভিসা হয়ে গেল এবং পরে রাতে ফিরে এলাম সান ডিয়েগোতে। পুরো ঘটনাটার সাথে যদিও আমাদের কনফারেন্সের কোনো মিল ছিলো না সত্য, তবুও পরের দিন আমাদের আলোচনায় এ বিষয়টি হাইলাইট হয়েছিল এবং পরবর্তিতে এফডি এর শিক্ষার মধ্যে পড়েছিল, তা হলো কাস্টমস রুলস এন্ড ইন্টিগ্রেশন ফর ড্রাগস এন্ড হিউম্যান অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।

আমার এন্ট্রি এবং রিএন্ট্রির কেসটি নতুন ইনোভেটিভ চিন্তার প্রতিফলন হয়েছিল এবং তা হলো রুলস এন্ড রেগুলেশন ফর ভ্যালিডেশন এন্ড রিভ্যালিডেশন। ভ্যালিডেশন এবং রিভ্যালিডেশন কি? একটি ওষুধ ধরা যাক এ্ইডস যা যৌনরোগের চিকিৎসার জন্য তৈরি করা হলো ইনজেকশন ফর্মে, সেই ইনজেকশন একই পদ্ধতিতে এবং একইভাবে তিনবার তৈরি করা এবং একই ফল সঙ্গে একই ইফেক্ট পাওয়া, কোনো রকম ডেভিয়েশন ছাড়া এবং পুরো কাজের পদ্ধতি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো ম্যানিফাকসারিং প্রাকটিস(জিএমপি) নিয়ম মেনে সব ধরণের ডুকুমেন্টেশনের সমন্বয়কে একত্রে করে যদি প্রতিফলন এক এবং অভিন্ন হয় তখন তাকে বলা হয় ভ্যালিডেশন এবং প্রতি দুই, তিন বা পাঁচ বছর পর পর একই ভাবে সেটাকে রিপিট করাকে রিভ্যালিডেশন বলা হয়। ১৯৯৫ সালের আমরিকার ভ্রমণ ছিল একটি শিক্ষামূলক ভ্রমন যা থেকে শিখেছিলাম শেয়ার ভ্যালু, লার্নিং ফরম লার্নার কনসেপ্ট, লার্নিং বাই ডুইং, কেস স্টাডি এবং অন দি জব ট্রেনিং। আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে রয়েছে লেসন ল্যার্নড-যা প্রতিনিয়ত আমাদের দৈনন্দিন জীবনেরই ঘটনা এবং যা থেকে কেউ শিখছে কেউ শেখাচ্ছে, নতুন কিছু জানা ও শেখা হোক জীবনের প্রতিটি মুহুর্তের উদ্দেশ্য এমনটিই কামনা করছি দূরপরবাস সুইডেন থেকে, আমি রহমান মৃধা।