গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেট থেকে নিখোঁজ হয়ে যাবার পর প্রতিবাদী সাংবাদিক জামাল খাশোগির নিখোঁজ রহস্য তদন্তে চাঞ্চল্যকর সব তথ্যপ্রমাণ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। ওয়াশিংটন পোস্ট মার্কিন ও তুর্কি গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে জানায়, তাদের কাছে এখন এমন কিছু ভিডিও ফুটেজ রয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে কনস্যুলেটে প্রবেশের পরই খাশোগির ওপর আক্রমণ করে ওঁত পেতে থাকা সৌদি গুপ্তঘাতকেরা। এ সময় তাকে হত্যা করে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ শরীর থেকে আলাদা করে ফেলে গুপ্তঘাতক দল। এই হত্যাকান্ডের যে অডিও রেকর্ডিং তদন্তকারীদের হাতে এসেছে তা আরও ভয়ংকর জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মার্কিন দৈনিকটি জানায়, অডিও রেকর্ডিংয়ে পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে কনস্যুলেটে প্রবেশের পর খাশোগিকে আরবি ভাষায় জেরা করা হচ্ছে। এরপর তাকে নির্যাতন ও খুনের সময় সৃষ্ট শব্দও রয়েছে অডিও অডিও রেকর্ডিংয়ে। তবে কিভাবে এসব রেকর্ডিং মার্কিন ও তুর্কি গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে সেই সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।

এদিকে সৌদি আরব থেকে আসা ১৫ সদস্যের গুপ্তঘাতকদলের বেশকিছু সদস্যের পরিচয় প্রকাশ করেছে তুরস্ক। এদের মধ্যে ৮ জন ঘাতককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই গুপ্তঘাতক দলের শীর্ষ সদস্য ছিল সৌদি প্রতিরক্ষা বাহিনীর ময়নাতদন্ত বিভাগের প্রধান এবং লন্ডনে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসের এক সাবেক প্রধান গোয়েন্দা কর্মকর্তা। এছাড়াও, সৌদি আরবের কুখ্যাত বিশেষ বাহিনীর সদস্যরাও এই অভিযানে অংশ নেয়। এই গুপ্তঘাতক দলটি হত্যাকান্ড সেরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তুরস্ক ত্যাগ করে। এই বিষয়ে তুরস্ক নীরব থাকবে না এবং সৌদি সরকারকে জবাবদিহিতা করতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েব এরদোগান। তবে, খাশোগি হত্যার তদন্তে সৌদি আরবের প্রতি মৌখিক চাপ সৃষ্টি করলেও দেশটির কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার কোন কারণ নেই বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রা¤প। গতকাল বৃহ¯পতিবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, খাশোগি নিখোঁজের ঘটনার রহস্য সমাধানের খুব কাছাকাছি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে, তাই বলে সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রয় ও সামরিক সহায়তা বন্ধ করা উচিত হবে না। বিশেষ করে, সৌদি আরবের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে স্বাক্ষরিত ১১ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রয় চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে বলেই তিনি দাবি করেন। গত বুধবার রিপাবলিকান দলের প্রভাবশালী সিনেটর র‌্যান্ড পল মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি এবং সামরিক সহায়তা বন্ধের আহ্বান জানান।

এদিকে খাশোগি নিখোঁজের ঘটনায় সৌদি আরবই জড়িত বলে জানিয়েছেন মার্কিন সিনেটের বিদেশ নীতি বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান বব কোর্কার। প্রভাবশালী এই রিপাবলিকান সিনেটর বলেন, এই ঘটনায় তৃতীয় কোনো দেশের জড়িত থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে এটা স্পষ্ট যে এখন পর্যন্ত যেসব গোয়েন্দা তথ্য আমরা পেয়েছি তাতে অভিযোগের আঙুল সৌদি আরবের দিকে তোলাই সঙ্গত হবে। বর্তমানে খাশোগি নিখোঁজের ঘটনায় মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করছেন কোর্কার ও তার কমিটির সদস্যরা। এছাড়াও জামাল খাশোগির জীবিত থাকার সম্ভাবনা খুবই সীমিত- এমনটাই জানিয়েছেন কোর্কার। সিনেট ফরেন রিলেশন্স কমিটির অপর সদস্য ও ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট সিনেটর টিম কাইনে বলেন, এখন সৌদি আরবের দায়িত্ব নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করা। সৌদিকে প্রমাণ করতে হবে, তারা কোনোভাবেই জামাল খাশোগিকে নির্যাতন, হত্যা ও গুমে অংশ নেয়নি।