ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ এবার বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে মশাবাহিত এই রোগ দমনে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে ঢাকায় এক কর্মসূচি থেকে।শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে আমরা’ প্ল্যাটফর্ম থেকে সিটি করপোরেশন ও সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতি এই আহ্বান জানানো হয়।

সমাবেশে চিকিৎসক, সমাজকর্মী, উন্নয়নকর্মী ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা অংশ নেন।সমাবেশে ডাকসুর সাবেক জিএস ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, আগের চেয়ে অনেক অনেক বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। সচেতনতার পাশাপাশি ডেঙ্গুর ভাইরাসবাহী এডিস মশা নিধন এবং নির্মূলে তৎপর না হলে এ মৃত্যু মহামারী আকাশ ধারণ করতে পারে।ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর নিয়মিত হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম (এনএইচসিএমসি)।তাদের তথ্য উদ্ধৃত করে খেলাঘরের নেতা ডা. লেনিন চৌধুরী সমাবেশে বলেন, গত ১৫ বছরের মধ্যে এবারই ডেঙ্গুতে মানুষের মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জনই শিশু।

চলতি বছর ৬ হাজার ৮৭৭ জনের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, যেসব রোগী দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে তাদের অবস্থা বেশি খারাপ হচ্ছে।ডেঙ্গুতে মৃত্যুর জন্য দেরিতে চিকিৎসার পাশাপাশি আক্রান্ত হওয়ার পর ব্যথার ওষুধ সেবন, পর্যাপ্ত পানি পান না করাও জটিলতা বাড়াচ্ছে বলে মেনে করেন এই চিকিৎসক।

তাছাড়া সচেতনতার অভাবেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হচ্ছে দাবি করে লেনিন বলেন, সচেতনতা বাড়াতে এবং ডেঙ্গু নির্মূলে জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত কর্মসূচি নেওয়া উচিৎ। এর জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশন ও সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগকেই দায়িত্ব নিতে হবে। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি অফিস, হাসপাতাল, আদালতসহ প্রত্যেক কর্মস্থলে যুগপৎভাবে মশা নিধনের কর্মসূচি নেওয়া উচিৎ।এই চিকিৎসক সিটি করপোরেশেনের মশা নিধনের ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা পরীক্ষা করার জন্যও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

সমাবেশে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সংগঠন আখতার হোসেন, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আদনান রিয়াদ, তারিক হোসেন মিঠুল, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান জন উদ্যোগের মাহবুবুল হক, নারী প্রগতি সংঘের নাসরিন পাপ্পু, আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি হরেন্দ্রনাথ সিং, রূপগঞ্জ খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম, কল্যাণপুর বস্তির বাসিন্দা স্বপ্না প্রমুখ।বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগটি আলোচনায় আসে ২০০০ সালে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর সারা দেশে ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মৃত্যু হয় ৯৩ জনের। পরের বছর ২ হাজার ৪৩০ জন আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয় ৪৪ জনের।

২০০২ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। ওই বছর ৬ হাজার ২৩২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় এবং ৫৮ জনের মৃত্যু হয়। এরপর ২০১৫ সাল পর্যন্ত মোটামুটি নিয়ন্ত্রণেই ছিল ডেঙ্গুর প্রকোপ।তবে ২০১৬ সালে এর ব্যাপকতা আবারও বেড়ে যায়। সে বছর ৬ হাজার ৬০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। মৃত্যু হয় ১৪ জনের। গত বছর ২ হাজার ৭৬৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে মারা যায় আটজন।চলতি বছরে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৮৭৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নয় জনের বয়স ১২ বছরের নিচে।