ভোলা জেলা এখন প্রাকৃতিক গ্যাসসমৃদ্ধ শিল্পায়নের পথে। ইতিমধ্যে এখানে গ্যাসভিত্তিক ৩৪ মেগাওয়াটের রেন্টাল এবং ২২৫ মেগাওয়াটের সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। নির্মাণাধীন রয়েছে আরও ২২৫ এবং ১০০ মেগাওয়াটের পৃথক দুটি বিদ্যুকেন্দ্র। ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া এলাকায় শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে।

দেশের বড় বড় শিল্পপতি ইতিমধ্যে ভোলায় শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার জন্য একাধিকবার পরিদর্শনে এসেছেন। কেউ কেউ জমি খুঁজতে শুরু করেছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ যখনই ভোলায় আসেন তখনই সঙ্গে করে নিয়ে আসেন দেশের কোনো না কোনো শিল্পপতিকে।

বাণিজ্যমন্ত্রীর স্বপ্ন শিল্প-কলকারখানা গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে তিনি তার নিজ জেলা ভোলাকে দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধিশালী জেলায় পরিণত করবেন। ভোলা হবে দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর! বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা দ্বীপজেলা ভোলা। চারদিকে নদীবেষ্টিত এই জেলার পুবে মেঘনা ও পশ্চিমে তেঁতুলিয়া নদী। উত্তরে ইলিশা নদী আর দক্ষিণে সমুদ্র।দীর্ঘদিন মেঘনা, তেঁতুলিয়া আর ইলিশার ভাঙনে ভোলার আয়তন ছোট হয়ে আসছিল।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ প্রথম ভোলাকে মেঘনার ভাঙন প্রতিরোধে তুলাতলি এলাকায় ব্লকবাঁধ দিয়েছিলেন। এরপর বর্তমান সরকারের আমলে তিনি মেঘনা, তেঁতুলিয়া আর ইলিশা নদীর ভাঙন রোধে প্রায় হাজার কোটি টাকার ব্লকবাঁধ নির্মাণের কাজ করছেন।
এ ছাড়া সড়ক যোগাযোগের জন্য ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ভোলার অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বেশ উন্নত। এখানে মাটির কাঁচা রাস্তা নেই বললেই চলে। যাতায়াত, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ এবং নদী ও সড়ক উভয় পথে মালামাল আনা-নেওয়া সহজসাধ্য হওয়ায় ভোলায় বড় বড় শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

ভোলায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের ফলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে এখানে। তাই গ্যাস ও বিদ্যুৎ সুবিধা থাকায় এরই মধ্যে ভোলায় প্রাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর ভিত্তি করে শেলটেক নামের বৃহত্তর একটি সিরামিক কারখানা গড়ে উঠেছে। কাজী ফার্ম লি. গড়ে তুলেছে সাগরিকা ফিড নামের বিশাল কারখানা। প্রিয় লি. নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে ব্রিকফিল্ড। তাসনীম অ্যাগ্রো লি. নামের একটি কোম্পানি বিদ্যুভিত্তিক নবান্ন অটোরাইস চালু করেছে। পাশাপাশি তারা নবান্ন জুটেক্স নামের একটি পাটকল স্থাপনের কাজ শুরু করেছে।

একদিকে জ্বালানি সংকটের কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, বিশেষ করে খুলনার শিল্প-কলকারখানাগুলো অচল হয়ে পড়েছে, অপরদিকে ভোলায় পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস, ইতিমধ্যে যার উত্তোলন এবং আবাসিক ও বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছে। ফলে ঘনবসতিপূর্ণ সমতলভূমির ভোলা শিল্প-কলকারখানা গড়ে তোলার জন্য আদর্শ একটি জেলা। এখানে জ্বালানির পাশাপাশি ভূমি ও শ্রমিক যেমন সহজলভ্য, তেমনি সড়ক ও নদীপথে মালামাল আনা-নেওয়াও সহজসাধ্য। তাই ভোলা জেলা এখন শিল্পায়নের পথে অনেকখানি এগিয়ে আছে।