সুন্দরবনের দুর্গম এলাকায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তথ্য আদান-প্রদান ও সার্বক্ষণিক যোগাযোগব্যবস্থা পুনর্বহালের উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। গত কয়েক বছরের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে সিডরের সময় সুন্দরবনের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। এরপর থেকে বনের দুর্গম এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছিল। অবশেষে সুন্দরবন এলাকায় বিস্তৃত আকারে যোগাযোগ পুনর্স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করেছে বন বিভাগ। সূত্র জানায়, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিলের অর্থায়নে তিন কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘সুন্দরবনে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা পুনর্স্থাপন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর আওতায় সুন্দরবনের ৫৬টি পয়েন্টে টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো স্থাপন করা হবে।

এর মধ্যে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগে ২৮টি, পশ্চিম বন বিভাগে ২৭টি এবং খুলনা বন সংরক্ষকের অফিসে একটি। এ প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনের গভীরে ৫০টি ভিএইচএফ টাওয়ার ও ছয়টি র‌্যাপোর্টার টাওয়ার নির্মিত হবে। এ ছাড়া ৫০টি ভিএইচএফ সেট, ছয়টি র‌্যাপোর্টার সেট, ৫৬টি সোলার ব্যাটারি ও ১০০টি ওয়াকিটকি সেট কেনা হবে।

বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বনরক্ষী মো. ইউসুফ হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বনের গভীরে অনেক দুর্গম এলাকায় দায়িত্ব পালন করি। সেখানে সাধারণত মোবাইলের নেটওয়ার্ক থাকে না। এ জন্য তৎক্ষণিকভাবে কারো সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ সম্ভব হয় না। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ওয়্যারলেস সেটের মাধ্যমে সবার সঙ্গে যুক্ত থাকা যাবে।’

বন বিভাগের কর্মকর্তারা আশা করছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে অপরাধ দমনে টহল কার্যক্রম আরও জোরদার করা যাবে। দ্রুত তথ্য প্রাপ্তির ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বনজ ও জলজ সম্পদ রক্ষা করা যাবে। ইকো ট্যুরিজম ও সুন্দরবনের অভ্যন্তরে চিত্তবিনোদনের সুযোগের সম্প্রসারণ ঘটবে। সর্বোপরি সুন্দরবনের সুরক্ষায় এ প্রকল্প অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

এ ব্যাপারে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘নানা কারণে সুন্দরবনের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ ছিল। ফলে আমাদের প্রশাসনিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছিল।’ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সক্রিয় করতে তিন কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সুন্দরবনের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। পুরো সুন্দরবন বন বিভাগের নজরদারিতে থাকবে।’

উল্লেখ্য, সুন্দরবনের অভ্যন্তরের অফিসগুলোয় একসময় স্বল্প পরিসরে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যকর ছিল। কিন্তু টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য নির্মিত ৫০টি টাওয়ার বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই থেকে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে আছে।