সদ্য পাশ হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নয়টি ধারা সংশোধন চেয়ে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ধারাগুলো সংশোধনের উদ্যোগ না নিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আইনি নোটিশে জানানো হয়।মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম জুলফিকার আলী জুনু রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এ নোটিশ পাঠান। তথ্যমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তথ্য সচিব, আইন সচিবদের নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, সম্প্রতি তথ্য প্রযুক্তি আইনের আলোচিত কয়েকটি ধারা বিলুপ্ত করে ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নতুন এই আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩১, ৪৩ ও ৫৩ ধারাগুলো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতা সুরক্ষা অন্তরায় বলে সাংবাদিক নেতারা বিভিন্ন সমাবেশ, মানববন্ধন ও সেমিনারে দাবি করেছেন।এসব সভা-সমাবেশ থেকে এই ধারাগুলো বাতিল ও সংশোধনের প্রস্তাব দাবি করেছেন সাংবাদিকরা। একই সঙ্গে এই ধারাগুলো সংবাদকর্মীদের স্বাধীনভাবে সংবাদ পরিবেশনে এবং প্রকাশে অন্তরায় হবে বলেও বিশিষ্ট সম্পাদকেরা অভিমত প্রকাশ করেছেন।এ অবস্থায় আগামী ৩০ দিনের মধ্যে এ ধারাগুলো বাতিল করে সংশোধন না করলে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে বলেও আইনজীবী জুলফিকার আলী জুনু জানান।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার পর থেকেই এ আইনকে স্বাধীন সাংবাদিকতায় হাতকড়া উল্লেখ করে আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরোধী নয়টি ধারা সংশোধনের দাবিতে মানববন্ধন করেছে সম্পাদক পরিষদ। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।মানববন্ধনে সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে দাবিগুলো তুলে ধরেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। তিনি বলেন, কয়েকজন মন্ত্রী বলেছেন, আলোচনার দরজা এখনো বন্ধ হয়নি। আমরাও মনে করি, আলোচনার দরজা বন্ধ হয়নি। কিন্তু আলোচনার নামে প্রহসন যেন না হয়।

মানববন্ধনে সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার আগে থেকেই এ আইনের বিভিন্ন ধারা নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করে আসছিলাম। আমরা মনে করি, আইনটি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থী। এটি শুধু সাইবার জগৎ নয়, স্বাধীন গণমাধ্যমেরও কণ্ঠরোধ করবে।এতে আরো বলা হয়, আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধী নই। কেবল আইনের বিশেষ কতগুলো ধারা সংশোধনের দাবি করছি। আগামী সংসদ অধিবেশনেই এই আইন সংশোধনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করার দাবি জানান তাঁরা।মানববন্ধনে তুলে ধরা দাবিগুলো হলো- ১. সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা সুরক্ষার লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা অবশ্যই যথাযথভাবে সংশোধন করতে হবে।২. এসব সংশোধনী বর্তমান সংসদের (আসন্ন) শেষ অধিবেশনেই আনতে হবে।

৩. পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে কোনো সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে তাদের শুধু নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু আটকে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে, তবে কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থা বন্ধ করার অনুমতি দেওয়া যাবে না। তারা শুধু তখনই প্রকাশের বিষয়বস্তু আটকাতে পারবে, যখন সংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা করে কেন ওই বিষয়বস্তু আটকে দেওয়া উচিত, সেই বিষয়ে যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারবে।৪. কোনো সংবাদমাধ্যমের কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থা আটকে দেওয়া বা জব্দ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আদালতের আগাম নির্দেশ নিতে হবে।

৫. সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের সাংবাদিকতা দায়িত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে প্রথমেই আদালতে হাজির হওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করতে হবে এবং সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের কোনো অবস্থাতেই পরোয়ানা ছাড়া ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া আটক বা গ্রেপ্তার করা যাবে না।৬. সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীর দ্বারা সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়েরের গ্রহণযোগ্যতা আছে কি না, তার প্রাথমিক তদন্ত করতে হবে প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে। ওই লক্ষ্যে প্রেস কাউন্সিলকে যথাযথভাবে শক্তিশালী করা যেতে পারে।৭. এই সরকারেরই পাস করা তথ্য অধিকার আইনকে দ্ব্যর্থহীনভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওপর প্রাধান্য দেওয়া উচিত এবং ওই আইনে নাগরিক ও সংবাদমাধ্যমের জন্য যেসব স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, সেগুলোর সুরক্ষা অত্যাবশ্যকভাবে করতে হবে।