বিহীত পূজার মধ্য দিয়ে সকালে শুরু হয় মহা অষ্টমীর আচার অনুষ্ঠান। সকাল থেকেই ঢাক- ঢোল, কাঁসর ঘণ্টার শব্দ, ফুল-চন্দন আর আরতিতে মুখর হয়ে ওঠে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন। বেলা গড়াতেই প্রাঙ্গণ মুখরিত হয় শঙ্খ, উলুধ্বনি আর মায়ের স্তব-স্তুতিতে। এর কিছুক্ষণ পরেই অজাতপুষ্প সুলক্ষণা আট বছরের শিশু পদ্ম হাতে আরোহন করলেন কুমারী পূজায় মায়ের আসনে।

মাটির প্রতিমায় যে দেবীর পূজা করা হয়, তারই বাস্তবরূপ কুমারী পূজা। দেবীর সাজে বালিকা রূপী প্রতিমা পূজার মর্মবাণী সমাজে নারীর মর্যাদা আর সম্মান প্রতিষ্ঠা করার। শারদীয় দুর্গাৎসবে মহাষ্টমী পূজার শেষে বর্ণাঢ্য এ পর্বটিই যথাযগ্য মর্যাদায় পালন করলেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।বুধবার (১৭ অক্টোবর) রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে সকাল ১১টাই কুমারী দেবীকে আসনে বসানো হয়। এরপর প্রার্থনা আয়োজন চলে দুপুর অবধি। এ সময় ভক্ত অনুসারীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে পূজামণ্ডপ। দশভুজা দেবীর বন্দনার পাশাপাশি মাতৃরূপে পূজিতা হন কুমারী।এবার কুমারী দেবীরূপে মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হন মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার খাবাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী মিতালী চক্রবর্তী। আট বছর বয়সী এ কুমারীর শাস্ত্রীয় নাম কুব্জিকা। এতে সমগ্র মাতৃজাতির শ্রেষ্ঠ, শক্তি, পবিত্রতা, সৃজনী ও পালনী শক্তিসহ সব কল্যাণী শক্তি সূক্ষ্ম রূপে বিরাজিতা।

সকালে কুমারী মিতালী চক্রবর্তীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। এরপর মাথা ও গলায় ফুলের মালা পরিয়ে, অলঙ্কার ও প্রসাধনে সাজানো হয় নিপুণ সাজে। সাজ শেষে হলে কুমারী মাকে মন্ত্র পাঠ করিয়ে, গঙ্গাজল ছিটিয়ে তার শরীর-মন শুদ্ধ করে পূজা করা হয় মাতৃজ্ঞানরূপে। অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস- এ পাঁচটি উপকরণ দিয়ে পূজা করা হয় কুমারীকে। কুমারীপূজা সম্পন্ন হলে ভক্তরা মাকে প্রণাম করেন। শেষে ভক্তরা দুর্গাপূজার অঞ্জলি দেন এবং এরপর ভক্ত দর্শনার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয় মহাপ্রসাদ।পূজা শেষে কথা হয় কুমারী মিতালী চক্রবর্তীর সঙ্গে। সে বলেন, সবাই আমাকে পূজো দিয়েছে, খুবই ভালো লাগছে। আমি সবাইকে আশীর্বাদ করেছি, যেন তারা ভালো থাকে।জগতে নারীর যথাযথ মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতেই মূলত কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়। এ কারণে পূজা মণ্ডপে অন্যান্যদের পাশাপাশি প্রচুর নারী সমাগমও দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে মণ্ডপে আসা দর্শনার্থী নিবেদিতা বকশি বলেন, কুমারীপূজার মধ্য দিয়ে মাতৃভাবে ঈশ্বরেরই আরাধনা করা হয়। কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা করে তাতে জগজ্জননীর উদ্দেশ্যে আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করি। কুমারীকে দুর্গাজ্ঞানে পূজা করে সবার মধ্যে মাতৃভাবের সঞ্চার করা হয়। এই পূজা আমাদের নারী জাতির প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা এবং সমাজ ও জীবনকে মহৎ করতে শেখায়।