রাজধানীতে শীতের আমেজ না পেলেও আপনি বাজারে গিয়ে পাবেন শীতকালীন শাক সবজি।মৌসুম শুরুর আগে এই সবজি আপনার জন্য বিক্রেতার ঝুড়িতে থাকলেও দাম হাকা হচ্ছে অনেক বেশি। তবে শীতকালীন এ সবজির আবার দাম বাজার ভেদে কিছুটা কম বেশি রয়েছে। এদিকে, রাজধানীর বাজারগুলোতে বেড়েছে ডিমের দাম। দুই সপ্তাহ আগে ৯৫ টাকা ডজন বিক্রি হওয়া ডিমের দাম এখন দাঁড়িয়েছে ১২০-এ। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

সবজি বিক্রেতারা বলছেন, শীতকালীন শাক সবজির আগাম উৎপাদনের জন্য কৃষকের কাছ থেকে তাদের সরবরাহকারীরা বেশি দামে কিনেছেন। তাই তারাও বেশি দামে বিক্রি করছেন। তবে শীত বাড়ার সঙ্গে এসব সবজির দাম কমবে বলেও ক্রেতাদের প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন বিক্রেতারা।শুক্রবার সকালে সরেজমিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার, নতুন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের শীতের সবজি বিক্রি হচ্ছে। এসব সবজির মধ্যে শিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায়, ফুলকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতিটি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও বেগুন প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায়।এছাড়া ধনে পাতা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি, গাজর ৭৫ টাকা, মুলা ৪৫ টাকা, করলা ও চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি। তবে শীতের নতুন আলু বাজারে আসেনি এখনো। ১৫ দিনের মধ্যেই নতুন আলু বাজারে পাওয়া যাবে বলে বিক্রেতারা জানান।এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মহাখালী কাঁচাবাজার ও নতুন বাজারের তুলনায় কারওয়ান বাজারে শীতের সবজি একটু কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারভেদে রয়েছে দামের ভিন্নতা।

কারওয়ান বাজারের এক দোকানে শিমের কেজি ১০০ টাকা হলেও নতুন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আবার মহাখালী কাঁচাবাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। দাম কম বেশির বিষয়ে বিক্রেতাদের দাবি ভালো মন্দের জন্য হয়ে থাকে।মহাখালী কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরেই শীতের নানা ধরনের সবজি বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে সরবরাহ বাড়ছে। এসব সবজি নতুন বলে বাজারে দাম কিছুটা বেশি বলেও জানান রফিকুল।সংশ্লিষ্টরা জানান, শিম, ধুন্দল, ফুলকপি, বাঁধাকপি বেশি আসছে খুলনা, কুষ্টিয়া ও যশোর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা থেকে। এসব এলাকায় উঁচু জায়গায় সবজির চাষ ভালো হয়। এর বাইরে যেসব এলাকায় বন্যার পানি সরে গেছে, সেখানেও আগাম সবজির চাষ শুরু হয়েছে। আগামী একমাসের মধ্যে শীতকালীনসব ধরণের সবজি মানুষ সাধ্যমত দামে কিনতে পারবে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা। রোজার ঈদের পর ডিমের দাম কিছুটা বাড়লেও কোরবানির ঈদের পর তা কমে আসে। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় দাম বেড়ে ডিম এখন অনেকটাই নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বাজারে কারও নজরদারি না থাকার কারণে ডিমের দাম এখন দফায় দফায় বাড়ছে বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন ডিমের চাহিদা খুব বেড়েছে। বাজারে ডিমের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, খামারিরা তা সরবরাহ দিয়ে পারছে না। সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় ডিমের দাম বেড়েছে।ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক মাসের ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে ৩ দফা। এর মধ্যে শেষ দুই সপ্তাহ দাম বৃদ্ধির হার ছিল সব থেকে বেশি।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, শুধু ডিম বিক্রি করেন এমন ব্যবসায়ীরা প্রতি ডজন ডিম ১০৫-১১০ টাকায় বিক্রি করছেন। এক সপ্তাহ আগেও এসব ব্যবসায়ীরা ৯৫-১০০ টাকা ডজনে ডিম বিক্রি করেছেন।খুচরা পর্যায়ে মুদিদোকানে এক পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০-১১ টাকায়। আর হালি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকায়। এসব ব্যবসায়ীরা এক ডজন ডিম বিক্রি করছেন ১১৫-১২০ টাকায়।মালিবাগ হাজিপাড়ার ব্যবসায়ী মো. সাবু বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরেই ডিমের দাম বাড়তি। কিছুদিন আগেও এক ডজন ডিম ৯০ টাকায় বিক্রি করেছি। আর এখন এক ডজন ডিম ১১০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাজারে এখন ডিমের অনেক চাহিদা। খামারিরা চাহিদা অনুযায়ী ডিম সরবরাহ করতে পারছেন না। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়ে গেছে। তবে দাম বাড়লেও আমাদের বিক্রি কমেনি। আবার লাভও বাড়েনি। কারণ আমাদেরকেও বাড়তি দামে ডিম কিনে আনতে হচ্ছে।রামপুরার ব্যবসায়ী জয়নাল মিয়া বলেন, প্রায় প্রতিদিনই ডিমের দাম বাড়ছে। ৯০ টাকা ডজন বিক্রি হওয়া ডিমের দাম দেখতে দেখতে ১১০ টাকা হয়ে গেছে। অবস্থা এমন দাম বেড়ে কোথায় যেয়ে থামবে ঠিক নেই।এতো বেশি দামে ডিম এর আগে কবে বিক্রি করেছেন? এমন প্রশ্ন করা হলে এই ব্যবসায়ী বলেন, আমি পাঁচ বছরের ওপরে ডিমের ব্যবসা করছি। এখন যে দামে ডিম বিক্রি করছি, এতো বেশি দামে এর আগে কখনও বিক্রি করিনি। তবে গত রোজার ঈদের আগে এক ডজন ডিম ১০৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি।

পূর্ব রামপুরার মুদি ব্যবসায়ী মো. শামছু বলেন, কিছুদিন আগে একপিস ডিম ৮ টাকা বিক্রি করেছি। এখন এক পিস ডিম ১১ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে এক হালি নিলে ৪২ টাকা রাখা যাবে।ডিমের দাম এতো বেশি কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমরা বলতে পারবো না। দাম বাড়ার কারণ খামারিরাই ভালো বলতে পারবেন। আমরা আড়ত থেকে ডিম কিনে আনি। আড়তে দাম বেশি হলে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। আড়তে দাম কমলে আমরাও দাম কমিয়ে দেবো।এদিকে ডিমের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। রামপুরায় ডিম কিনতে আসা আফজাল হোসেন বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরেই ডিমের দাম বাড়ছে। প্রথমে এক ডজনের দাম ৯৫ টাকা থেকে ১০০ টাকা হলো। কিন্তু সপ্তাহ না ঘুরতেই এখন ১১৫ টাকা ডজন হয়েছে।তিনি বলেন, বাজারে কারও কোনো মনিটরিং নেই। ফলে যে যখন যেভাবে পারছে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের। দাম বাড়লেও আমাদের কিছু করার নেই। চুপচাপ মেনে নিয়ে বাড়তি দামেই কিনতে হবে।