হেদায়েতুল্লার ছেলে রাহুল।গ্রাম জুড়ে হেদায়েতুল্লার খুব নাম ডাক |সবাই তাকে ভালোবাসে ।কথা শুনে।তিনি একজন সরকারী কর্মকর্তা,সে সাথে এলাকার একটি মসজিদের ইমাম , প্রতি শুক্রবার তিনি সেখানে নামাজ পড়ান।তবে প্রভাব প্রতিপত্তির জন্য নয়,বাস্তবিকই,সকলে তাকে খুব ভালোবাসে।

কিন্তু হঠাত সবাই তার বিরুদ্ধাচরণ শুরু করল | কেউ এখন আর তার পিছনে নামাজ পড়তে রাজি নয় |দোষ তার- তিনি কেন তার ছেলেকে নামাজ পড়তে নিয়ে আসেন না?আর তার ছেলে নামাজ পড়তে আসতে চাইলে কেন তাকে গৃহ বন্দী করে রাখা হয়?

কোনোভাবেই ছেলেকে কোনো ইবাদত পালন করতে দেয়া হয়না ,এ বিষয় টি আজ মহল্লার কারোরই অজানা নয়।যার নিজের পরিবার বেনামাজী তাহলে কিভাবে এমন একজন জাহান্নামীর কথা মানুষ শুনবে?বরং এতদিন যে নামাজ পড়েছে তার পিছনে বিষয়টি ভেবে সকলে কপাল চাপড়াতে লাগল |হায়!হায় কি করলাম এতদিন?

মহল্লার কেউ তার সাথে কথা বলে না। এভাবে দীর্ঘকাল কেটে গেল….. ।ছেলের বয়স ১৮ তে উপনীত হল।এমন সময় তিনি মহল্লার গন্যমান্যসহ সবাইকে তার বাসায় দাওয়াত দিলেন | প্রথমে কেউ আসতে না চাইলেও বিশেষ অনুরোধে শুধুমাত্র একটিবার তার কথা শুনতে আসতে হলো।

সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ দিয়ে হেদায়েতুল্লাহ শুরু করলেন-‘আপনারা জানেন ঠিক আঠারো বছর আগে তিন মাসের জন্য আমি বাংলাদেশে গিয়েছিলাম |’

-জ্বি, বলে সবাই উত্তর দিল |

‘আপনারা জানেন তখন রাহুলের জন্ম হয়েছিল,আসলে আমার স্ত্রী সন্ত্রাসীদের গুলিতে চিরদিনের জন্য বন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল বিয়ের আগেই সে কথা হয়ত আপনারা কেউ জানেন না। আমি রাহুলকে বাংলাদেশ থেকে কিনে এনেছিলাম | সনাতন ধর্মাবলম্বী পিতাহীন এ ছেলেটির শেষ সম্বল ছিলো ওর – মা।আমরা যখন বাংলাদেশে যাই ,তখন ওর মা ও সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়।
এখন আপনারাই বলেন যেখানে সূরা বাকারার ২৫৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই । সেখানে ওর উপরে কেন বা কি করে চাপিয়ে দিব নামাজ পড়,রোজা রাখ?ইসলাম তো জোর করে চাপিয়ে দেয়ার কিছু নয়।এর শ্রেষ্ঠত্ব তো উপলব্ধি করতে হয় ।এখন ওর বয়স হয়েছে তাই ওর যেটা ভালো লাগবে সেটিকে ও মেনে চলবে |’

লেখক ঃ মুহাম্মদ হাসান মাহমুদ ইলিয়াস
সাংবাদিক ,