চুয়াডাঙ্গা শহরের ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষু শিবিরে গিয়ে চোখ হারানো ১৭ জনের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে চোখ হারানো ২০ জনকে আজীবন চিকিৎসাসেবা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টার ও আইরিশ কোম্পানিকে এই ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসা দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে রোববার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।এ ছাড়া ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে তা তদারকি করতে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন আদালত।আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইজীবী অমিত দাসগুপ্ত।এর আগে গত ১৩ আগস্ট চোখ হারানো ২০ জনের প্রত্যেককে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়। শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন আদালত। চোখ হারানো’ ২০ জনের প্রত্যেককে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে গত ১ এপ্রিল রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়।একটি জাতীয় দৈনিকে ‘চক্ষু শিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন!’ শীর্ষক শিরোনামে ২৯ মার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গার ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে তিন দিনের চক্ষু শিবিরের দ্বিতীয় দিন ৫ মার্চ ২৪ জন নারী-পুরুষের চোখের ছানি অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহীন। তবে বাসায় ফিরেই ২০ জন রোগীর চোখে ইনফেকশন দেখা দেয়। এসব রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ মার্চ অপারেশনের পর ৬ মার্চ তাদের প্রত্যেককেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বাড়ি ফিরে ওই দিনই কারো বিকেলে, কারো সন্ধ্যায়, কারো রাত থেকে চোখে জ্বালা-যন্ত্রণা হয় ও পানি ঝরতে শুরু করে। পরের দিনই তারা যোগাযোগ করেন ইমপ্যাক্ট হাসপাতালে। তাদের তখন গুরুত্ব না দিয়ে কোনো রকম চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে উঠলে ফের তারা ইমপ্যাক্টে যান। সেখান থেকে তখন কয়েকজন রোগীকে স্থানীয় এক চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। স্থানীয় ওই চক্ষু বিশেষজ্ঞ তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন। এদের মধ্যে চারজন রোগী নিজেদের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্বজনদের নিয়ে ঢাকায় আসেন। পরে ইমপ্যাক্ট থেকে ১২ মার্চ একসঙ্গে ১৬ জন রোগীকে ঢাকায় নেওয়া হয়। তত দিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ৫ মার্চের ওই অস্ত্রোপচারের ফলে এদের চোখে এত ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে যে, ১৯ জনের একটি করে চোখ তুলে ফেলতে হয়েছে।