কৃষি খাতে বাড়ছে ঋণ বিতরণ। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণও। এ খাতে খেলাপি বা মন্দ ঋণের পরিমাণ এখন ৫ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যার প্রায় ৯৫ শতাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর।বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ কৃষি ও পল্লী ঋণ বিষয়ক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

জানা গেছে,বাংলাদেশ ব্যাংকের জোর তৎপরতা এবং ব্যাংকগুলোর উদ্যোগের কারণে কৃষিঋণ বিতরণ বাড়ছে। তবে বন্যা, নদী ভাঙন, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে ঋণ সঠিক সময়ে আদায় হচ্ছে না, যার কারণে বেশকিছু ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে।কৃষিঋণে এ খেলাপি হয়ে যাওয়াকে মোটেই ইতিবাচকভাবে দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।চলতি (২০১৮-২০১৯) অর্থবছরে ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে (জুলাই- সেপ্টেম্বর) প্রথম তিন মাসে বিতরণ হয়েছে ৩ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ১৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। আর গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭৪২ কোটি টাকা কম। গত অর্থবছর এ সময় ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছিল ৪ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা।প্রতিবেদনের তথ্য অনুয়াযী, এ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর শেষে কৃষি খাতে মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হওয়া ৫ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা মোট ঋণের ১৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আলোচ্য সময় পর্যন্ত সরকারি ব্যাংকগুলোর ২৯ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে খেলাপি রয়েছে ৫ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৯৫ শতাংশ; যা ব্যাংকগুলোর কৃষি ঋণ স্থিতির ১৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর মোট ৯ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকার কৃষি ঋণের বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ২৪৫ কোটি টাকা।

কৃষি ঋণের খেলাপি ঋণের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। ব্যাংকটির ২ হাজার ২১৫ কোটি টাকা এখন খেলাপি। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকে এক হাজার ৫৭৭ কোটি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ৮৯৩ কোটি, জনতা ব্যাংকে ৪৭৭ কোটি এবং অগ্রণী ব্যাংকের ২১২ কোটি টাকার ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের শীর্ষে রয়েছে উত্তরা ব্যাংক। এ ব্যাংকের ৩০ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে। এ ছাড়া এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ১২ কোটি, ন্যাশনালের ৬ কোটি ৯৪ লাখ, ঢাকা ব্যাংকের ৬ কোটি ৮৫ লাখ, এবি ব্যাংকের ৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এখন খেলাপি।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, আলোচিত সময়ে দেশি-বিদেশি খাতের ৮টি ব্যাংক এ অর্থবছরে কৃষি খাতে কোনো ঋণ বিতরণ করেনি। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশি ব্যাংক আল ফালাহ, সিটি ব্যাংক এনএ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং ওরি ব্যাংক। এ ছাড়া মধুমতি এবং সীমান্ত ব্যাংক কোনো ঋণ বিতরণ করেনি।বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের ২ দশমিক ৫ শতাংশ ঋণ পল্লী অঞ্চলে বিতরণ করতে হবে। পল্লী অঞ্চলে অর্থ সরবারহের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করা ও খাদ্য নিরাপত্তা সৃষ্টিতে সরকারের লক্ষ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক এ নির্দেশনা জারি করে। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যবস্থা চালু করে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে অনর্জিত লক্ষ্যমাত্রার সমপরিমাণ অথবা বিকল্পভাবে অনর্জিত লক্ষ্যমাত্রার ৩ শতাংশ হারে হিসাবায়নকৃত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখার নিয়ম রয়েছে।২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো মোট ২১ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকার কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১০৫ শতাংশ। গত অর্থবছরে মোট ৩৯ লাখ ৬২ হাজার ৫০৮ জন কৃষি ঋণ পেয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকগুলো নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও এমএফআই লিংকেজের মাধ্যমে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১৩৭ নারী ৬ হাজার ৩০৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকার কৃষি ঋণ পেয়েছেন।