সনাতন-হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হওয়ার সপ্তাহ না পেরোতেই আবারো পাহাড়ে উৎসবের রঙ লেগেছে। বিশ্ব মানবজাতির শান্তি ও মঙ্গল কামনায় খাগড়াছড়িতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা (ওয়াগ্য পোয়েহ) পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে বুধবার সকাল থেকে বৌদ্ধ পুন্যার্থীরা বিহারে বিহারে সমাবেত হয়ে ধর্মীয় প্রার্থনায় অংশ নেয়।

প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে জেলা শহরের শতবর্শী য়ংড বৌদ্ধ বিহারসহ বিভিন্ন বিহারে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বুধবার ২৪ অক্টোবর ভোর থেকেই বিহারে বিহারে শুরু হয় মঙ্গল সূত্রপাঠ, ভিক্ষু সংঘের প্রাতঃরাশ, বুদ্ধ পতাকা উত্তোলন। এছাড়াও সকাল ১১ টায় সমবেত বুদ্ধ পুজা, পঞ্চশীল গ্রহণ, সংঘদান, বুদ্ধ মূর্তি দান, অষ্টপরিখা দানসহ সকল প্রকার দানীয় বস্তু প্রদান সম্পন্ন হয়।
এসময় ভিক্ষু সংঘের ধর্ম দেশনা, পিন্ডদান ও সমবেত বুদ্ধ øান অনুষ্ঠিত হয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ মঙ্গল কামনায় বিহার প্রাঙ্গণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে ভগবান বৌদ্ধের কাছে শান্তি ও মঙ্গল কামনা করেন। এদিকে প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে বিকেলে চেঙ্গী নদীতে উপগুপ্ত বুদ্ধের উদ্দ্যেশে নির্মিত রিচিমি (তৈরিকৃত ময়ুর পঙ্খী) পানিতে ভাসানোসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দিরে বিশ্ব শান্তি ও মৈত্রী কামনায় হাজার বাতি প্রজ্জ্বলন ও আকাশ প্রদীপ (ফানুস) উড়ানো হয়।

উল্লেখ, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী আড়াই হাজার বছর আগে বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে চীবর (বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র) তৈরি করে ভগবান বুদ্ধকে দান করেন। সেই ঘটনা অনুসরণ করে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা প্রতিবছর চীবর দান উৎসব পালন করে। এ দানের বৈশিষ্ট হলো ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সূতা তৈরী, রং করা ও সেলাই করে বৌদ্ধ ভিক্ষুকে দান করতে হয়। তাই এই দানকে কঠিন চীবর দান বলা হয়।আষাঢ়ি পূর্ণিমার পর দিন থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিন মাসব্যাপী ওয়া বা বর্ষাব্রত (উপবাস) পালন শুরু হয়। তিন মাস পর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মাঝে আনন্দের বার্তা বয়ে আনে প্রবরাণা পূর্ণিমা। প্রবারণা পূর্ণিমা পালনের পর থেকে বিহারে বিহারে শুরু মাসব্যাপী দানোত্তম কঠির চীবর দানোৎসব।পূণ্যের আশায় পূর্ণার্থীদের পানীয় জল খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তরুণ-তরুণীরা। বিহার প্রাঙ্গণের বাইরেও বসে গ্রামীণ মেলা। আর এই উৎসবকে ঘিরে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছাড়াও বিহার গুলোতে পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়ী-বাঙালী সকল সম্প্রদায়ের মিলন মেলায় পরিণত হয়।