ফেনীতে গৃহকর্মী শিশুকে নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শাহানা আক্তার শাহেনী। মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্বীকার করেন তিনি। পুলিশ শাহেনীর ঘর থেকে বেশকিছু নির্যাতনের আলামত সংগ্রহ করে।

শাহেনী পুলিশকে জানায়, গৃহকর্মী প্রিয়াঙ্কা আক্তারের উপর জ্বিন ভর করেছে। যখন জ্বিন তার উপর ভর করতো তখন শরীরে আগুনের ছ্যকা দিলে জ্বিন চলে যেতো। আর সে কারণেই তিনি প্রিয়াঙ্কার শরীরে মোমবাতির আগুনের ছ্যাকা দিতেন। তবে স্থানীয়রা জানায়, জ্বিনের কথা বলে শাহেনী দীর্ঘদিন ধরে শিশুটির উপর নির্যাতন করে আসছে। তারা আরো জানায়, মেয়েটির শরীরে মোমবাতির ছ্যাকা দিলে সে কাঁদতে শুরু করলে হাসতো শাহেনী।

বাংলা চলচ্চিত্রের অশ্লীল যুগের পাশর্^ চরিত্রের অভিনেত্রী ছিলেন শাহানা আক্তার শাহেনী। সর্বমোট ৪৫টি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। তবে বিগত চার বছর ধরে অভিনয় থেকে দূরে সরে এসেছেন তিনি। কোন সন্তানাদি না থাকায় পিতা-মাতাহীন প্রিয়াঙ্কারে পালক সন্তান হিসেবে নেন তিনি।

শাহেনীর ভাই জাহাঙ্গীর আলম জানান, বেপরোয়া জীবন যাপনের কারণে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে তার সঙ্গে পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই। স্বামীর সঙ্গেও তার কোন যোগাযোগ নেই। দীর্ঘদিন ঢাকায় বসবাস করে আসছে সে।

প্রতিবেশী জোহরা আক্তার জানান, মঙ্গলবার বিকালে শাহেনীর বাড়ীতে কান্নার শব্দ শুনে স্বামীকে নিয়ে তিনি সেখানে যান। ক্ষত-বিক্ষত প্রিয়াঙ্কাকে উদ্ধার করে তারা প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ কমপ্লেক্সে ও পরে আধুনিক ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করায়। প্রিয়াঙ্কার বরাত দিয়ে তিনি আরো জানান, সোমবার রাতে শাহেনী লাঠি দিয়ে পেটানোর পর তাঁর শরীর আগুনে ঝলসে দেয়। পরে তাকে আটক রেখে বেরিয়ে যায়। এভাবে প্রায়ই তার উপর নির্যাতন করতো বলে জানায় শিশুটি।শর্শদী ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলম জানান, মেয়েটি ওই এলাকার চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শাহেনী বেগমের বাসায় থাকতো। শাহেনী পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকলেও মাঝে মধ্যে শর্শদি ইউনিয়নের গজারিয়া কান্দি গ্রামের নিজ বাড়ীতে আসতেন।ফেনী সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ফয়জুল কবির বলেন, শিশুটির শরীরে অসংখ্য পোড়া ক্ষতস্থান রয়েছে। আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হতে পারে।ফেনীর পুলিশ সুপার এস.এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার গৃহকত্রী শাহানাকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহেনী নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছে। তাকে আরো তথ্যের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।