অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতের শিলংয়ে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ের আদালত।শিলংয়ের আদালত শুক্রবার রায় ঘোষণা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার।২০১৫ সালের মার্চে ঢাকার উত্তরা থেকে নিখোঁজ হন সালাহউদ্দিন আহমেদ। নিখোঁজ হওয়ার প্রায় দুই মাস পর মে মাসে ভারতে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের একটি রাস্তায় উদভ্রান্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় সালাহ উদ্দিন আহমেদকে। এরপর শিলংয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা করা হয়। মেঘালয়ের সিটি থানায় তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলায় শর্ত সাপেক্ষে জামিন প্রদান করেন আদালত। আদালত সালাহ উদ্দিন মেঘালয়ের বাইরে যাওয়া যাবেনা এমন শর্তে জামিন দেন।

জামিন পেয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ শিলংয়ে একটি গেস্ট হাউস ভাড়া থাকতে শুরু করেন। সেখান থেকেই তিনি তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলা চালিয়ে যান। শিলংয়ে চিকিৎসাও চালিয়ে যান বিএনপির এই নেতা।সালাহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ভারতে অনুপ্রবেশের মামলা হলেও তাঁর পরিবারের অভিযোগ ছিল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে উত্তরার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে । তিন বছর ধরে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে কার্যত বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন। চতুর্থবার পেছানোর পর তার বিরুদ্ধে মামলাটির রায় হল। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে ঢোকার অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্টের ১৪ ধারায় তিন বছর ধরে এ মামলা চলে।অবশ্য বিএনপির এই নেতার দাবি, তাকে বাংলাদেশ থেকে অপহরণ করা হয়েছিল।আর কোন পথে কীভাবে তিনি শিলংয়ে পৌঁছেছিলেন, সে তথ্যও ভারতীয় পুলিশ উদঘাটন করতে পারেনি।

সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন সালাহ উদ্দিন। পরে তিনি চাকরি ছেড়ে কক্সবাজারের সংসদ সদস্য হন এবং ২০০১-০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদও সংসদ সদস্য ছিলেন।নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে ২০১৫ সালের শুরু থেকে বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা অবরোধ-হরতালের মধ্যে সালাহ উদ্দিনের অন্তর্ধান নাটকীয়তার জন্ম দেয়। সে সময় তিনি ছিলেন দলের পাঁচ যুগ্ম মহাসচিবের একজন।রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে অজ্ঞাত স্থান থেকে এক মাসের বেশি সময় ধরে বিএনপির নামে বিবৃতি পাঠিয়ে কর্মসূচি দিচ্ছিলেন সালাহ উদ্দিন। এরই মধ্যে ১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী।স্বামীর খোঁজ চেয়ে পরদিন গুলশান থানা ও উত্তরা থানায় জিডি করতে চাইলেও পুলিশ তা নেয়নি বলে সে সময় অভিযোগ করেন হাসিনা আহমেদ। সরকারের ‘নির্দেশে’ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই সালাহ উদ্দিনকে ‘নিয়ে গেছে’ বলে সে সময় বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে সে অভিযোগ তখন নাকচ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সালাহ উদ্দিনকে গ্রপ্তার করা হয়নি। তবে তাকে আটক করতে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সালাহ উদ্দিনের অন্তর্ধানে তার দলের হাত রয়েছে’বলেও সে সময় ইঙ্গিত দেন প্রধানমন্ত্রী।স্বামীর খোঁজ চেয়ে উচ্চ আদালতে যান সাবেক সাংসদ হাসিনা আহমেদ। পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়, তারাও এই বিএনপি নেতার কোনো খোঁজ জানে না।ঢাকা থেকে ‘উধাও হওয়ার দুই মাস পর ২০১৫ সালের ১১ মে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে হদিস মেলে সালাহ উদ্দিনের। ভ্রমণের কাগজপত্র দেখাতে না পারায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়।কিছুদিন কারাগার ও হাসপাতালে কাটানোর পর স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনায় জামিন পান সালাহ উদ্দিন। কিন্তু ভারত ছাড়ার অনুমতি না থাকায় স্ত্রী ও কয়েকজন স্বজনের সঙ্গে শিলং শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন।২০১৬ সালে অসুস্থতার কারণে দিল্লি গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আসেন এই বিএনপি নেতা। পরিবার তাকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিতে চাইলেও তাতে শিলংয়ের আদালতের সায় মেলেনি।ফরেনার্স অ্যাক্টের এ মামলার তদন্ত শেষে মেঘালয় পুলিশ ২০১৫ সালের ৩ জুন সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। সেখানে বলা হয়, ভারতে এই বিএনপি নেতার আকস্মিক উপস্থিতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি অভিযোগের বিচার এড়াতে তিনি ভারতে এসেছেন। ওই অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ২২ জুলাই শিলংয়ের আদালত সালাহ উদ্দিনের বিচার শুরু করে। শিলংয়ের আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আই সি ঝাকে উদ্ধৃত করে নাগাল্যান্ড পোস্টের খবরে বলা হয়, এ মামলার বিচার আদালত সালাহ উদ্দিন আহমেদের বক্তব্য রেকর্ড করে এবং তাকে পরীক্ষা করা দুই চিকিৎসকসহ ১০ জনের সাক্ষ্য শোনে। শুক্রবার তার রায় হল।